ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আলী যাকেরের জন্য ‘গার্ড অব অনার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ২:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২০

একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক অভিনেতা, নির্দেশক আলী যাকেরের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়েছে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে, অশ্রুচোখে বন্ধু-স্বজন-সহকর্মীরা তাকে জানিয়েছেন শেষ বিদায়। প্রয়াত এই অভিনেতার মরদেহ শুক্রবার বেলা ১১টার পর শেরেবাংলা নগরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ট্রাস্টি।

সেখানে জাতীয় পতাকায় মোড়া আলী যাকেরের কফিনে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে মার যান আলী যাকের। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। গত চার বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে আসা এই অভিনয় শিল্পীর শরীরের দুদিন আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গত শতকের সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ আর টেলিভিশনে দাপুটে অভিনয়ের জন্য দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন নিয়ে আছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতা।

ক্যান্সার নিয়েই সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘গ্যালিলিও’ নাটকে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই প্রসঙ্গ ধরে তার স্ত্রী অভেনেত্রী সারা যাকের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে বলেন, “তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরে বলে গিয়েছিলেন, ‘গ্যালিলিও হবে আমার করা শেষ কাজ।’ তিনি তা করে যেতে পেরেছিলেন। ধন্যবাদ সকলকে, যারা দীর্ঘ যাত্রায় আমাদের সাথে ছিলেন।”

আলী যাকেরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসেছিলেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। তিনি বলেন, “সদালাপী, মিষ্টভাষী ও অনন্য অভিনেতা আজ হারিয়ে গেলেন।”

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘গ্যালিলিও’ নাটকের প্রদর্শনীতে অভিনেতা আলী যাকের ফিরেছিলেন নাম ভূমিকায়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘গ্যালিলিও’ নাটকের প্রদর্শনীতে অভিনেতা আলী যাকের ফিরেছিলেন নাম ভূমিকায়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমানশ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, সারওয়ার আলী, মামুনুর রশীদ, তারিক আনামসহ অনেকেই, যারা ছিলেন আলী যাকেরের সহযোদ্ধা, সহকর্মী।

মামুনুর রশীদের হাত ধরেই ১৯৭২ সালে আরণ্যকের ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন আলী যাকের, যার মধ্যে দিয়ে মঞ্চে তার পথচলার শুরু হয়। পরে তিনি যোগ দেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে। মৃত্যু পর্যন্ত আলী যাকের এই নাট্যদলের সভাপতি ছিলেন।

মামুনুর রশীদ বলেন, “আলী যাকের মঞ্চে অসাধারণ প্রভাব সৃষ্টি করে গেছেন। তার দেওয়ান গাজীর কিসসা ও বিশেষ করে নূরলদীনের সারাজীবন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে করাচিতে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মজীবন শুরু করেন আলী যাকের। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি এশিয়াটিকের দায়িত্ব নেন, মৃত্যুর সময় তিনি কোম্পানির গ্রুপ চেয়ারম্যান ছিলেন।

অভিনেতা, নির্দেশক আলী যাকের। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমানঅভিনেতা, নির্দেশক আলী যাকের। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমানমুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আলী যাকের প্রথমে ভারতে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক আলমগীর কবির তাকে উদ্বুদ্ধ করেন প্রচারযুদ্ধে অংশ নিতে। আলী যাকের যুক্ত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। মঞ্চে নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর চরিত্রে আলী যাকেরের অভিনয় দর্শক যেমন মনে রেখেছে, টেলিভিশনে ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘আজ রবিবার’এর নাটকেও তার অভিনয় দর্শকপ্রিয় হয়েছে।

‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আলী যাকের। বেতারে অর্ধশতাধিক শ্রুতি নাটকেও কাজ করেছেন।

নাটকে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

 

 
Electronic Paper