সুদমুক্ত ঋণে গাড়ির অনিয়মে পড়ছে না লাগাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২০
প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণে কেনা গাড়ি ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নিয়ে অনিয়মের লাগাম টানা যাচ্ছে না। অনিয়ম রোধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক করে ফের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সিনিয়র সচিবসহ সচিবদের চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালার আওতায় কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির জ্বালানি তেল, ড্রাইভারের বেতনসহ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ প্রতিমাসে দেওয়া হচ্ছে আরও ৫০ হাজার টাকা।
নীতিমালার আওতায় সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কর্মকর্তাদের অনেকেই ব্যবহার করছেন পারিবারিক কাজে। নিজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেও তুলে নিচ্ছেন রক্ষণাবেক্ষণের পুরো টাকা। এই অনিয়ম দূর করার জন্য এর আগে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর, ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৮ মার্চ সতর্ক করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। এই অনিয়মের কথা জানিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী, গাড়ি সুবিধার প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলতে বোঝাবে- সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সুপারিশ ক্রমে সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে কমপক্ষে তিন বছর অতিক্রম করেছেন এমন কর্মকর্তা, সরকারের যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব/সিনিয়র সচিব।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দফতর/অধিদফতর সংস্থায় কর্মরত ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা’র আওতায় সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়। এ সব কর্মকর্তার গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার আওতায় সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ‘বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত)’ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তা সুদমুক্ত ঋণের গাড়ি ব্যবহার না করে মন্ত্রণালয় বিভাগের অধীন অধিদফতর, সংস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করে অফিস যাতায়াতসহ পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে কিছু কিছু কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই গাড়ি ব্যবহার না করে গাড়ি সেবা নগদায়নের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বাবদ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। এতে সরকারের জ্বালানি ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়টি রোধে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে ও সরকারি গাড়ি অপব্যবহার থেকে বিরত রাখতে ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত)’ জারি করা হয়েছে। এ নীতিমালার ব্যত্যয়ে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী অসদাচরণ বলে গণ্য হবে বলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ও সরকারি যানবাহনের অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চারটি নির্দেশনা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী ১০০ শতাংশ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীনস্ত দফতর/সংস্থা/উন্নয়ন প্রকল্পের যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। প্রেষণ/মাঠ প্রশাসন/প্রকল্পে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা থাকলে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ নির্ধারিত অর্থের ৫০ শতাংশ পাবেন। কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীন দফতর/সংস্থা/উন্নয়ন প্রকল্পের যানবাহন ব্যবহার করা ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, এর ব্যত্যয় হলে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী অসাদাচরণ হিসেবে গণ্য করা বলে ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা’য় উল্লেখ করা হয়েছে।
এই অবস্থায় সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ও সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ যথাযথভাবে নিশ্চিত করাসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীন দফতর/অধিদফতর এবং সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সচিবদের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।