ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দীপন হত্যার ৫ বছরেও মেলেনি বিচার

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ৪:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২০

জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি মামলার বিচার কাজ। এদিকে ছেলের খুন হওয়ার বিচারের আশায় আজও চোখের পানি ঝরাচ্ছেন দীপনের বাবা। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে এই বছরের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

মামলার অগ্রগতিতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, দীপন যে নেই, আমাদের সেই দুঃখের প্রতিকারও তো নেই। দীর্ঘ পাঁচটি বছর হয়ে গেল আমার ছেলে নেই, অথচ বিচারের তেমন অগ্রগতি নেই। মাঝখানে করোনার কারণে বিচারকাজ থেমে গিয়েছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। 

পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দুপুরের পর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিন একই সময় লালমাটিয়ায় শুদ্ধশ্বও প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ, লেখক সুদীপ কুমার ওরফে রণদীপম বসু ও প্রকৌশলী আবদুর রহমানকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। দীপন হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানায় দুই ঘটনার পেছনেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা জড়িত।

দীপন হত্যা মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৯ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম ছারওয়ার খান জাকির বলেন, তিন বছর তদন্তের পর মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর সিএমএম আদালত থেকে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আসে। এখন মামলাটির চার্জগঠন শেষে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এখন পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আরও কয়েকজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানি হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষ হলেই মামলার রায় ঘোষণা করবেন আদালত। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই মামলাটির বিচারকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, মামলায় নতুন আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। মাত্র একদিন সাক্ষীদের জেরা করেছি। মামলাতে আসামিদের দেওয়া ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে বিচার কার্য চলছে। মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নেই। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। আশা করছি, সবাই ন্যায়বিচার পাবেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর দীপন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুর রহমান ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আসামিরা হলেন- আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে স্বাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।

২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়। এরপরই ওই বছরের ১৯ মার্চ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক আসামি সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া ও আকরামের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। ১৬ মে তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ এবং ৩০ জুন মামলার পলাতক এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন আদালত। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর সব (আট জন) আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

 

 
Electronic Paper