জাল টাকার মাস্টারমাইন্ড
প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০
তৎকালীন বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত হন কাজী মাসুদ পারভেজ। এর মাত্র দুই বছর পরই সম্পদের পাহাড় গড়তে জাল টাকার কারবার শুরু করেন। ১৪ বছরে দেশের জাল টাকা তৈরির একটি বড় চক্রের মাস্টারমাইন্ড হয়ে ওঠেন মাসুদ। শুধু দেশেই নয়, কলকাতার বাজারেও জাল টাকা ও ডলার ছড়িয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েন তিনি। জাল টাকার ব্যবসাই নয়, নানাভাবে মানুষ ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পটু ছিলেন মাসুদ। অসংখ্য মানুষকে টাকা ডাবল করে দেওয়ার স্কিমের নামে ঠকিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কষ্টি পাথরের ব্যবসা, সীমান্তের পিলারে সোনা থাকে এমন গুজব ছড়িয়ে পিলার বিক্রির মতো নানা প্রতারণায় মাসুদের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাজী মাসুদ পারভেজ ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে তৎকালীন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরে (বর্তমান বিজিবি) সিপাহী পদে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় ২০০৪ সালে হিলি সীমান্তে পাহারারত অবস্থায় পায়ে গুলি লাগে তার। মাসুদ দাবি করেন, মিসফায়ারিংয়ে তার পায়ে এ গুলি লেগেছে। উন্নত চিকিৎসার পরও মেডিকেল টেস্টে আনফিট হওয়ায় চাকরি হারান তিনি। এর বছর দুয়েক পর জাল টাকার ব্যবসায় নেমে পড়েন চাকরিচ্যুত এই বিডিআর সিপাহী।
সূত্র আরও জানায়, মাসুদের নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে জাল টাকার এক বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। চক্রটি দেশের বাইরেও জাল টাকা ছড়িয়ে দিত। ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি টাকার ভালো লেনদেন থাকায়, জাল টাকার বাজার হিসেবে এ শহরকেই টার্গেট করে চক্রটি। ২০ হাজার টাকায় সেখানে এক লাখ জাল টাকা বিক্রি করত তারা। এ ছাড়া কলকাতায় যেহেতু ডলারেরও বেশ চাহিদা রয়েছে, তাই ব্যবসায় প্রসারের আশায় সেখানে জাল টাকার পাশাপাশি জাল ডলার বানিয়েও সরবরাহ করত এই চক্র।
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৫৯ লাখ জাল টাকা, ১১৩টি জাল ডলার ও বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরি সরঞ্জামসহ এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড কাজী মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একটি দল। এ সময় মাসুদের আরও ৫ সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চক্রটির সঙ্গে দেশি-বিদেশি অনেক সদস্য জড়িত। কয়েকজন দেশে এবং বাকিরা দেশের বাইরে কাজ করে। সীমান্তের কোনো দুর্বল জায়গায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই অবৈধ জাল টাকার লেনদেন হয়। দেশে তৈরি করা জাল টাকা ও ডলারগুলো এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে কৌশলে সীমান্ত পার করে দেয়। সীমান্তের ওপারে থাকা চক্রের অন্য সদস্যরা নগদ টাকার বিনিময়ে সেগুলো সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে তা সেখানকার বাজারে ছড়িয়ে দেয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটি মাসুদের নেতৃত্বে অনেক বছর ধরেই জাল টাকার এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছিল। তারা ঈদ-পূজার মতো বড় উৎসবকে টার্গেট করে বিভিন্ন জায়গায় সহযোগীদের মাধ্যমে জাল টাকা সরবরাহ করত। চক্রটি ডলার তৈরিতেও পারদর্শী ছিল। তাদের বানানো ডলার আসল না নকল তা সহজে বোঝা যেত না।
তিনি আরও বলেন, চক্রটির মাস্টারমাইন্ড মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে এর আগেও বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। এবার আমরা তার বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলা করব, যাতে সে সহজে বের হয়ে আসতে না পারে। চক্রটির অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, এ চক্রের হোতা মাসুদ পারভেজ এক সময় বিডিআরের সিপাহী ছিলেন। ২০০৪ সালে তার চাকরি চলে যায়। এরপর সে অপরাধ জগতে পা রাখে। জাল টাকার ব্যবসা ও নানাবিধ প্রতারণা করে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই মাসুদ। তার একটি ডেইরি ফার্ম, একটি আইটি ফার্ম, ঢাকা শহরে তিন-চারটি বাড়ি ও ব্যাংকে অঢেল টাকা রয়েছে। মাসুদের বিরুদ্ধে যশোর ও সাতক্ষীরায় প্রতারণার মামলাও রয়েছে।