দুর্ভোগে উপকূলবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:১০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২০
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রস্তুতি নিলেও টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা ও নোয়াখালীসহ উপকূলে বাস করা মানুষ আতঙ্কে সময় পার করছে। এ জন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
এদিকে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম করছে। একই সঙ্গে বৃষ্টি ঝরিয়ে নিম্নচাপটি দুর্বল হতে থাকায় সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ থেকে বিদায় নিয়েছে। দেশের অবশিষ্টাংশ থেকেও শিগগিরই বিদায় নেবে মৌসুমী বায়ু। এর আগে আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাওসার পারভীন গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বলেন, নিম্নচাপটি দুপুর ১২টা থেকে সাগরদ্বীপের পাশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। সন্ধ্যার মধ্যে তা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ কাওসার পারভীন জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা থেকে ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সারা দেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা : উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে আজ শনিবারও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম বা তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার এবং গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত ৭৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি সভা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক আতিকুল হকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগাম সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন ও উপকূলীয় অঞ্চল সংলগ্ন জেলায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রত্যেক জেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে শুকনা খাবার এবং শিশু খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা ও জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন প্রস্তুত রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আওতায় প্রশিক্ষিত ৭৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কর্মী বাহিনীও দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বন্দরনগরী : দুদিন ধরে বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনজীবন একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে পানি উঠেছে। ফলে রাস্তায় রিকশাসহ গণপরিবহন কমে গেছে। বৃষ্টির কারণে গতকাল শুক্রবার দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে চট্টগ্রামের ম-পে অঞ্জলী দিতে আসা পূজার্থীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
হাতিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা উত্তাল থাকায় উপকূলে প্রথমে ৪ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখানো হলেও পরে তা নামিয়ে ৩ নম্বর দেখানো হয়। এদিকে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার জন্য ইউএনওদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে উপকূলের নিম্নাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত উপকূলীয় হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জসহ পুরো জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।