লাখো প্রাণে স্বস্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরতে চাওয়া প্রবাসীরা টোকেনের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে টিকিট পাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় শুক্র এবং শনিবারও দেওয়া হবে টিকিট। টিকিটপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে পুলিশ মাইকে এ ঘোষণা দেয়। এদিকে গতকাল সকালেও রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের সামনে ভিড় করেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। টিকিট নিয়ে যেন কোনো কারসাজি না হয়, তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুকদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার আহ্বান জানিয়েছে।
পুলিশ মাইকে আরও জানায়, বৃহস্পতিবার ১ থেকে ৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হবে। শুক্রবার ৫০১ থেকে ৮৫০, শনিবার ৮৫১ থেকে ১২০০, রোববার ১২০১ থেকে ১৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হবে। এছাড়া যারা এখনো টোকেন পাননি, তাদের আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর আসতে বলা হয়েছে।
এদিকে সৌদি আরবগামী বাতিল হওয়া সব রুটের ফ্লাইট আগামী ১ অক্টোবর চালু হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্লাইট অনুযায়ী সবাই দেশটিতে কাজে যোগ দিতে পারবেন। একই দিন থেকে ওমানের প্রবাসীরাও কাজে ফিরতে পারবেন। তবে পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট থাকতে হবে এবং পৌঁছে ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে কাজে যোগদানের বিষয়ে যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা আশা করছি তার সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে। এরপরও আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার প্রবাসীদের বিষয়ে বরাবরই আন্তরিক হয়ে কাজ করছে।
সৌদির টিকিট পেয়ে স্বস্তি; বিমানও ফ্লাইট বাড়িয়েছে : মহামারীকালে যারা সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরতে পারছিলেন না, তাদের কয়েক দিনের অপেক্ষা আর বিক্ষোভের পর টিকিট বিক্রি শুরু করেছে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স; বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও আরও দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। গতকাল বেলা ১২টার পর থেকে কারওয়ানবাজারের হোটেল সোনারগাঁওয়ের অফিস থেকে টিকেট ছাড়া শুরু করে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স।
বহু প্রত্যাশিত টিকেট হাতে পাওয়ার পর রেজাউল করিম নামে একজন বলেন, সৌদি আরব থেকে তিনি দেশে এসেছিলেন মার্চের ১২ তারিখ। দুই মাস দেশে থাকার পর চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাস সংকটে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকা পড়েন। ২২০০ রিয়াল খরচ করে আপডাউন টিকিট কিনে এসেছিলাম। আমার টিকিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন কোনো খরচ ছাড়াই তারা টিকিটের মেয়াদ বাড়িয়েছে।
আগামী ২৬ তারিখ রাতে আমি যাত্রা করব। গাইবান্ধার ছেলে রেজাউল আক্ষেপ করে বলেন, তিন দিন অপেক্ষার পর টিকিট পেলাম। এখন আর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। করোনা টেস্ট করে রিপোর্ট নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে থাকার পর সেখান থেকেই রওনা হতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলারই সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারীকালে সৌদি আরব প্রবাসী যারা দেশে এসেছিলেন, দেশটির সরকার বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করলেও বাংলাদেশ থেকে যাওয়ায় দেখা দেয় বিপত্তি।
সৌদি আরবের অনুমতি না মেলায় সেদেশে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে পারেনি বিমান। ফলে সৌদিতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি বিমানের টিকিট কেটে রেখেও যেতে পারছিলেন না। অন্যদিকে ফ্লাইট কম থাকায় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সও এত যাত্রীর চাপ নিতে পারছিল না।
এ পরিস্থিতিতে সৌদি প্রবাসী কর্মীরা নামেন বিক্ষোভে। তারা বিমান ও সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে দুদিন বিক্ষোভের পর বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেন। পরে রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ আবদুল মোমেন জানান, সৌদি আরব সরকার ভিসা ও ইকামার (ওয়ার্ক পারমিট) মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েছে।