সবার দৃষ্টি তিন পদে
আল্লামা শফীর হেফাজত, বেফাক ও জামি’আতিল কওমিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা, হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনায় তিনজন
শাহীন আলম, চট্টগ্রাম
🕐 ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
দেশের সর্ববৃহৎ কওমি মাদ্রাসা চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সদ্যপ্রয়াত মুহতামিম (মহাপরিচালক) আল্লামা শাহ আহমদ শফী একই সঙ্গে আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। এগুলো হচ্ছেÑহেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এবং আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া। হঠাৎ শতবর্ষী প্রবীণ এ আলেমের মৃত্যুর পর এখন কে বা কারা আসছেন এ তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে- সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
জানা যায়, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হয়। তখন এর আমির মনোনীত হন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে ‘নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি এবং ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তির বিধানসহ ব্লাসফেমি আইন করার দাবিতে’ অনুষ্ঠিত লংমার্চে এসে রাজধানীর শাপলা চত্বরে জমায়েত হওয়ার পর হেফাজতে ইসলাম দেশব্যাপী নজর কাড়ে। গত শুক্রবার রাতে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলামের প্রধান বা আমির হিসেবে তিনজনের নাম আলোচনায় আসছে। তারা হলেন- মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী এবং বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
সংশ্লিষ্টদের অনেকে বলছেন, যিনিই এ পদে আসুন না কেন, সিগন্যাল যাবে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে। আল্লামা শফী ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) প্রধান। ২০০৫ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি ২০১৭ সালে সরকার স্বীকৃত সম্মিলিত বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধানই জামি’আতিল কওমিয়ার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সরকার স্বীকৃত এ সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে রয়েছে ছয়টি বোর্ড। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী বোর্ড হচ্ছে বেফাক। বাকি পাঁচটি বোর্ডের একটিও চট্টগ্রামভিত্তিক-আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া চট্টগ্রাম। এ ছয় বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত সব দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদ্রাসা সম্মিলিত বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার অধীনে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বর্তমান পরিস্থিতিতে কে আসছেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং সরকার স্বীকৃত সম্মিলিত বোর্ডের প্রধান হিসেবে- এ আলোচনা এখন সর্বত্র।
বিতর্কিত নানা ভূমিকার কারণে বেফাকের বর্তমান মহাসচিব ও ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবদুল কুদ্দুছের সম্ভাবনা এ তালিকায় দেখছেন না অনেকে। আপাতত আলোচনায় যাদের নাম আসছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- বেফাকের সহসভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী ও নুরুল ইসলাম, ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ আরও কয়েকজন।
হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনায় তিনজনের কমিটি
এদিকে গত শনিবার হেফাজতে ইসলামের আমির ও হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দাফনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাদ্রাসাটির নতুন মুহতামিম নির্বাচিত করেছেন মজলিশে শূরার সদস্যরা। এক্ষেত্রে আমূল বদলে ফেলা হয়েছে মাদ্রাসা পরিচালনার প্রচলিত নিয়মও। এখন থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) পদে একজনের পরিবর্তে তিনজন দায়িত্ব পালন করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা পরিচালনা করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় মাদ্রাসাটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ মজলিশে শূরার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শূরা বৈঠকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নায়েমে তালিমাত বা শিক্ষা সচিব এবং প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যে পদে ছিলেন আল্লামা শফীপুত্র হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক আল্লামা আনাস মাদানী।
শূরা বৈঠকে যে তিনজনকে যৌথভাবে মাদ্রাসা পরিচালনার ভার দেওয়া হয়েছে, তারা হলেনÑমুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ আহমদ এবং মাওলানা ইয়াহইয়া। শূরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ তিনজনের সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন এবং কেউ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। নতুন করে নিযুক্ত তিনজনের মধ্যে শেখ আহমদ ছাড়া বাকি দুজন জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী। ফলে দৃশ্যত দায়িত্ব না নিলেও হাটহাজারী মাদ্রাসায় বাবুনগরীর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার আসরের নামাজের পর শুরু হওয়া মাদ্রাসাটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ মজলিশে শূরার এ বৈঠক সমাপ্ত হয় রাত ৮টার দিকে। বৈঠকে আরও যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, সালাউদ্দিন নানুপুরী, নোমান ফয়জী, মাওলানা সোহাগ নোমানী, ওমর ফারুক, নূর আহমদ, মাওলানা নূর ইসলাম জিহাদী প্রমুখ।