ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অবশেষে পেঁয়াজ এলো

নিজস্ব প্রতিবেদক ও হিলি প্রতিনিধি
🕐 ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০

অবশেষে সীমান্তে পাঁচ দিন ধরে আটকে থাকা পেঁয়াজের চালান হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবার বিকাল সোয়া ৩টায় পেঁয়াজ নিয়ে ভারতীয় ট্রাকগুলো বন্দরের পানামা পোর্টে প্রবেশ করে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, শুধুমাত্র গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে এলসি করা পেঁয়াজগুলো ভারত সরকার রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এ কারণে ২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ গতকাল শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আমদানি হয়। গত ৫ দিন ধরে সীমান্তে আটকে থাকার কারণে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আশা করছি বাকি ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ পর্যায়ক্রমে আমদানি করা হবে।

পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা কমেছে। এর মাধ্যমে টানা তিন দিন পাইকারি বাজারে কমল দেশি পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম কমায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে। একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম আরও কমে যাবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। যা গত তিনদিন ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

গত শুক্রবার রাতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি বন্ধের আগে সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ফলে গতকাল শনিবার থেকে পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে বন্দরের ভারত অংশে ২৫০-৩০০ পেঁয়াজ বোঝাই ভারতীয় ট্রাক আটকা পড়ে।

দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ঢাকার ভারতীয় কমিশনের সূত্রকে বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ জানায় ভারত প্রায় ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ (ইতোমধ্যে ট্রানজিট বা রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত) বাংলাদেশে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্কের খাতিরে’ রপ্তানির এ অনুমতি দিয়েছে ভারত।

সূত্র মতে, গতকাল শনিবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এতে ভারতের বিভিন্ন সড়কে প্রায় ২৫০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়।

ভারতের পেঁয়াজ ছাড়ের অনুমতির বিষয়টি ইতোমধ্যে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে জানিয়েছেন বলে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে জি নিউজ। ভারতীয় কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা ‘ন্যাপেড’ গত সোমবার থেকে হঠাৎ করে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৭৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।

এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায় ৪০-৫০ টাকা। তবে গত দুই দিন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। পরে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করতে ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বিবেচনায় নেওয়ার কথা উল্লেখ করেই বুধবার ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়। চিঠি পাওয়ার দুইদিন পরেই পেঁয়াজ ছাড়ের অনুমতি দিল ভারত সরকার।

এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়ে যায় মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিদের আন্দোলন। নাসিকের কাছে লাসালগাঁও মান্ডির সামনে তারা শুরু করে দেন অবস্থান বিক্ষোভ। রাজ্যের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও এনসিপি দলের নেতা শারদ পাওয়ার কৃষকদের দাবিকে সমর্থন জানান। তিনি বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে আমরা পাকিস্তানের সুবিধা করে দিচ্ছি না তো?

মিয়ানমার থেকে এল পেঁয়াজের প্রথম চালান : ভারত রপ্তানি বন্ধের পর বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজের প্রথম চালান দেশে এসে পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে চালানটি টেকনাফ স্থলবন্দরে ট্রলার থেকে খালাস হচ্ছে। মিয়ানমারে লকডাউনের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত থাকার মধ্যেই চালানটি এলো।

মিয়ানমারে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর গত ৩ জুলাই থেকে দেশটির সঙ্গে স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। এর মধ্যে পেঁয়াজের চালানটি এলেও নতুন করে আরও চালান আসবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। টেকনাফ স্থলবন্দরের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, দুটি ট্রলারে করে ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। চালানটি খালাস করা হচ্ছে। এই চালানটির মাধ্যমে আড়াই মাস পর পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলো।

 

 
Electronic Paper