ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাদিয়ার বিয়ের ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বয়স্ক পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। পাত্রকে কানাডায় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য হতে হবে বলে শর্ত উল্লেখ করতেন। এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পাততেন এসএসসি পাস সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। তার ফাঁদে পা দিয়ে আগ্রহী অনেক পাত্র হারাতেন সর্বস্ব। এভাবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি।

এদিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সিআইডি। এ সময় তার বিরুদ্ধে গুলশান থানার করা প্রতারণার মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর শরীফুল ইসলাম শরীফ। অপরদিকে সাদিয়ার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।

তিনি বলেন, ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’- জাতীয় দৈনিকে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও প্রতারক জান্নাতের কথাবার্তা ও স্মার্টনেস দেখে কানাডা প্রবাসী ভেবেই সবাই ভুল করতেন। তার ফাঁদে পড়ে কোটি টাকা খোয়া গেছে অনেকের। গত ১১ বছর ধরে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযানে তার কাছ থেকে ফাঁদে পা দেওয়া ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, তিনটি মেমোরি কার্ড, সাতটি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেন সাদিয়া। তাতে বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সী সন্তানহীন বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই।’ একটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেখে নাজির হোসেন নামে এক ব্যক্তি জান্নাতুলের মোবাইলে যোগাযোগ করেন।

একপর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবেন এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন- জান্নাতুলের এসব প্রলোভনে বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে জান্নাতুল জানায়, কানাডায় প্রচণ্ড শীত। তাই সেখান থেকে তার দুইশ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। দেশেই ব্যবসা করবেন।

ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, ডিএইচএল এর মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস। গত ১১ বছরে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন, তার একটি হিসাব খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার হিসাব আসরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আমরা সেগুলোতে ১ কোটি টাকা পেয়েছি।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলে পরে সেই মোবাইল বন্ধ করে দিতেন। আমরা এ চক্রের আরও সদস্যদের গ্রেফতার চেষ্টা করছি। সাদিয়া এভাবেই ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এ প্রতারণা শুরু করেন। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।

 
Electronic Paper