ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেঞ্জ কর্মকর্তার বিতর্কিত আদেশে হত্যার সূত্র

তানজেরুল ইসলাম ও মো. নেজাম উদ্দিন
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২০

চট্টগ্রাম মহেশখালী রেঞ্জে শিক্ষানবিশ ফরেস্টার ইউসুফ উদ্দিন হত্যাকা-ের ঘটনায় রেঞ্জ কর্মকর্তার গাফিলতিতে ক্ষেপেছেন বন বিভাগে কর্মরতরা। শিক্ষানবিশ এবং অনভিজ্ঞ ফরেস্টার ইউসুফকে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বে একটি টহল দলের দলনেতা বানিয়ে ‘জনস্বার্থে আদেশ জারি’ করে এ বিতর্কের জন্ম দেন সদ্য বিদায় হওয়া মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সুলতানুল আলম চৌধুরী। মহেশখালী রেঞ্জ চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের অধীন।

অনুসন্ধান বলছে, গত ১০ জুলাই তৎকালীন মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী রেঞ্জটির ‘কেরনতলী বিটে সার্বক্ষণিক অবস্থানপূর্বক টহল কার্য পরিচালনা করার জন্য এবং বন অপরাধ দমনে একটি টহল দল গঠন করে দেন। ঝুঁকিপূর্ণ ওই টহল দলের সদস্য মাত্র পাঁচজন। টহল দলের দলনেতার দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষানবিশ ফরেস্টার ইউসুফের ওপর। কথিত জনস্বার্থে জারিকৃত ওই আদেশে টহল দল গঠনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার লিখিত কিংবা মৌখিক আদেশের কথা উল্লেখ করা হয়নি। টহল দলের সদস্যদের নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা এবং বনভূমি রক্ষার্থে সরকারি অস্ত্র প্রদান করা হয়নি। টহল দলের পাঁচ সদস্যের মধ্য ফরেস্ট গার্ড মাত্র একজন। এ ছাড়া টহল দলের সদস্যদের মধ্যে দুজন বিএম এবং একজন লস্কর।

এ ব্যাপারে নবনিযুক্ত মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘বিদায়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী সরকারি নিয়ম না মেনে একজন শিক্ষানবিশ ফরেস্টারকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে পারেন না। যদি দিতে হয় তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে দিতে হবে।’

বিগত দিনে মহেশখালী রেঞ্জে প্রশিক্ষণ নেওয়া এক ফরেস্টার জানান, ‘তাকে দিয়েও একটি টহল দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে শিক্ষানবিশদের অনুরোধ এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে জানালে টহল দলের গঠনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। যদিও শিক্ষানবিশ ফরেস্টার ইউসুফকে দিয়ে টহল দল গঠনে সফল হন মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা। মূলত প্রশিক্ষণার্থী ফরেস্টারদের নানাভাবে হয়রানি করার রেওয়াজ বন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

অনুসন্ধান আরও বলছে, কেরনতলী বিটে হামলার ঘটনা তদন্তে প্রথমপর্যায়ে সহকারী বন সংরক্ষক সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম গোলাম মওলা। অথচ ওই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয় মহেশখালীতে বিতর্কিত আদেশ জারিকারী সেই রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরীকে। এতে আপত্তি জানায় নিহত ইউসুফের পরিবার। ক্ষোভে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তদন্ত কমিটি থেকে মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার দাবিতে ঝড় তোলেন বন বিভাগে কর্মরতরা।

এদিকে গেল ৬ আগস্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর এক অফিস আদেশে পূর্বের গঠিত তদন্ত কমিটি বাতিল করে সহকারী বন সংরক্ষক সাইফুল ইসলামকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করে ফের তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑ সীতাকু- রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এবং চরনদ্বীপ রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী (ফরেস্টার)।

অপরদিকে ৩০ জুলাই বন বিভাগে কর্মরতদের ওপর হামলার ঘটনায় ১ আগস্ট ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত তৎকালীন কেরনতলী বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবির বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় পাঁচজনের নামোল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং১/১৭৪)। ওই মামলায় কেরনতলী বিট কর্মকর্তা বাদী হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহত ইউসুফের পরিবার। এতে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা পড়ার আশঙ্কা তাদের।

এসব ব্যাপারে জানতে টহল দলের বিতর্কিত আদেশ জারিকারী সাবেক মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা (বর্তমানে ওএসডি) সুলতানুল আলম চৌধুরীর মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে তিনি রিসিভ করেন। তবে দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার সংবাদকর্মী পরিচয় দিলে ‘কথা বোঝা যাচ্ছে না বলে তিনি দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’ পরবর্তীতে তাকে কল ও এসএমএস দিলেও উত্তর দেননি।

অন্যদিকে জনস্বার্থে বিতর্কিত আদেশ জারিকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরীকে প্রথম পর্যায়ে তদন্ত কমিটির সদস্য এবং পরে তোপের মুখে সেই কমিটি বাতিল প্রসঙ্গে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এসএম গোলাম মওলা জানান, ‘তদন্ত কমিটি গঠন এবং বাতিলের ক্ষমতা আমার আছে।’ মহেশখালী রেঞ্জে পানের বরজ থেকে ঘুষ গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি আর বলেন, ‘এসব অভিযোগ তদন্তে কাজ করছে কমিটি।’

 
Electronic Paper