ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খুব কাছ থেকে দেখা শেখ কামাল (৪)

কামাল নিজের জন্য কিছুই চাইতেন না

বদরুল আলম চৌধুরী
🕐 ৯:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৮, ২০২০

বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক বলা হয় তাকে। যার ধ্যান-জ্ঞান সার্বক্ষণিক খেলাধুলা আর সংস্কৃতিতে ছিল মিশে। ছিলেন খেলোয়াড়, দক্ষ সংগঠক। বাংলাদেশের খেলাধুলাকে আলোচিত জায়গায় নিয়ে যাওয়াই ছিল যার লক্ষ্য। তিনি হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। এই আগষ্টেই তার জন্ম এবং মৃত্যু। খেলাধুলায় শেখ কামালের মেধা, চিন্তা চেতনা নিয়ে কাছের লোকদের ধারাবাহিক কথোপকথন...

আগস্ট জাতির জন্য শোকের মাস। এই মাসে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন। আর কামাল সম্বন্ধে বলতে গেলে বলে শেষ করা যাবে না। সে ছিল মাল্টিপাচেটেড লোক। সে শুধুমাত্র ২৬ বছর বয়সে, এত অল্প বয়সে এত কিছু এচিভ করতে পেরেছে। 

কামালকে সবাই চেনেন আবাহনী দিয়ে। কিন্তু তিনি আরেকটা সংগঠন, স্পন্দনও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, স্পন্দনের মাধ্যমে যে মারফতি গান, রক গানের প্রচলন। তাতে কামালের দূরদর্শিতারই প্রমাণ হয় আজকে, এ ধরনের গান খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে। সেই সংগঠনটা এখন দ্বিতীয় প্রজন্মে গেছে।

কামাল মাত্র ২৬ বছর জীবিত ছিলেন। এই সময়ে তিনি এতগুলো সংগঠনের সঙ্গে জড়িতই ছিলেন না, সেখানে পারফর্মও করতেন। আজাদের জন্য ক্রিকেট খেলেছিলেন, ফাস্ট বোলারও ছিলেন। ভালো বোলিং করতে পারতেন। বাস্কেটবলে নামী ক্লাবেও খেলতেন।’

আমার মনে আছে কেন তিনি আবাহনী করতে চাইতেন। তখন ফুটবল ক্লাব একটাই ছিল- মোহামেডান। খেলার মান বাড়াতে প্রতিযোগিতার জন্যই মোহামেডানের মানের আরেকটা ক্লাব তিনি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সে শুধু তৈরি-ই করেননি। এর ফলে আবাহনী- মোহামেডানের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বছরের পর বছর রয়ে গেছে।

কামালের অনেক গুণ ছিল। দুটো জিনিস বলতেই হয়, শুধু খেলোয়াড়দের জন্যই না, অনেকের চাকরির জন্যও তদবির করতেন। সবাইকে সাহায্য করার অনুভূতি কাজ করত। আমি সবসময়ই বলে এসেছি, যেটা নতুন প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

একটা বিষয় চিন্তা করুন- আজকে যে নতুন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে এসেছে। আর কামাল হল বঙ্গবন্ধুর ছেলে, এটা কি কল্পনা করা যায় তখন নতুন একটা দেশে, স্বাধীন দেশে, বঙ্গবন্ধুর কি মর্যাদা না ছিল। কি ক্ষমতা ছিল, বঙ্গবন্ধু যদি তখন দশজন লোককে বলত তোমরা জান দিয়ে দেবে, দিয়ে দিত। এটা হল সেই বঙ্গবন্ধুর ছেলে। কিন্তু তার ভেতরে সেটা দেখা যায়নি।

আমরা কিন্তু দেখেছি তারপর অনেক ক্ষমতাশীল নেত্রী আছেন, ওদের ছেলেমেয়েদের দেখেছি। কিন্তু কামাল যে এত ক্ষমতাশীল সেটা সে কিন্তু কোনদিন কাউকে বুঝতে দেয়নি। সে একাধারে ক্রীড়া, স্পন্দন প্রতিষ্ঠা করেছে। ঢাকা থিয়েটার করেছে, ভালো অ্যাথলেট ছিল সে।

ওই সময় নতুন দেশ, আমি নতুন ব্যবসা শুরু করেছি। আমরা তখন বেক্সিমকো তৈরি করলাম। তখন আমার চোখে দেখা নতুন দেশ, নতুন বাংলাদেশ, অনেক ব্যবসার সুযোগ ছিল। অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে আসত। এবং দেখেছি আমার সামনে তারা এভাবে ওভাবে কামালের কাছে দিত নানান রকমের প্রস্তাব। তো এ ব্যবসাটা কইরা দাও, তোমাকে এত বেশি টাকা দেব। এই কাজটা কইরা দাও, তোমাদের এত কমিশন দেব। এ ব্যবসাটার জন্য তোমাকে এই জিনিসটা দিইয়া দিই, তুমি এই জিনিসটা নিয়া নাও। এবং একটা ইয়াং ছেলে, ওর জন্য কত বিশাল লোভনীয় ছিল? তার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এবং লোকজন দেখা করতে আসত। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না যে, সে কারো সঙ্গে ব্যবসা করেছে।

আমি একবার লন্ডনে যাব বললাম- ‘দোস্ত আমি লন্ডনে যাচ্ছি, কি আনব তোমার জন্য? অন্য কেউ হলে বলত, আমার জন্য একটা শার্ট আন, স্যুট আন, কলম নিয়ে আন কিংবা ঘড়ি নিয়ে আস। সে বলল, আমার আবাহনীর ছেলেদের জন্য কেডস আন। সত্যি, তার কাছে কমিউটি ফোকাস ছিল। জাপান যাচ্ছিলাম বলল স্পন্দনের জন্য অর্গান আন। তার মাথায় সব সময় আবাহনী, স্পন্দন বা ঢাকা থিয়েটার থাকতো। আসলে ওর সম্পর্কে কথা বলতে গেলে অল্পতে শেষ করা যাবে না। অনেক সময় নিয়ে কথা বলতে হবে। কিন্তু তার যে স্ট্রং কারেকটার ছিল, এত অল্প বয়সে সে এত মাল্টি প্যাচেটেড কাজগুলো করেছে এটা নিয়ে আমার মনে হয় বলে শেষ করা যাবে না।

তবে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। তাকে যে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান করে সম্মান জানিয়েছে। যদি শেখ কামাল বেঁচে থাকতো, তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতো এই দেখে যে, আজ আমরা ক্রিকেটে অনেক নাম করে ফেলেছি। এটাই তার আসল স্বপ্ন ছিল। এমনকি কামাল বেঁচে থাকলে অলিম্পিকসেও পদক জিততে পারতাম।

তবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যদি প্রতি বছর উদ্যোগ নেয় তাহলে কামালের বহুমুখী প্রতিভা তুলে ধরার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তার সম্পর্কে কিছু জানাতে পারব। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে কামাল সম্বন্ধে ইয়াং জেনারেশনকে কিছু বললে, আমার মনে হয় কামালের আইডিয়াটা তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি পরিবেশ তৈরি করবে।

 
Electronic Paper