ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ফরিদপুরে তোলপাড়

ফরিদপুর প্রতিনিধি
🕐 ১০:০৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০২০

ফরিদপুরে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পুঁজি করে দুই হাজার কোটি টাকা উপার্জন ও পাচারের ঘটনায় দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং মামলায় একের পর এক গ্রেফতারে ফরিদপুরের জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বহুল আলোচিত দুই ভাইÑসাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ গ্রেফতার হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ১৬ নেতা। আরও অনেকেই গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তবে তাদের সঙ্গে শহর ছেড়ে জেলার সর্বত্র এবার তুমুল আলোচনা চলছে এই বরকত ও রুবেলদের পৃষ্ঠপোষক কারা?

তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের অভিযোগ, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তার ভাই মোহতেসাম হোসেন বাবর ও মন্ত্রীর এপিএস ফুয়াদের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা বরকত ও রুবেল রাতারাতি ফরিদপুরের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ফরিদপুরে আর কাউকে সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকা- করতে দেওয়া হবে না। কারও বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশের চলমান অভিযানের শুরুতেই গত ৭ জুন রাতে ৯ সহযোগীসহ গ্রেফতার হন সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল। বরকত ছিলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই তিনি শহর যুবলীগের সভাপতি হন। এছাড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতিও হন। তারপরই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের সাংবাদিকতার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হন এবং একটি পত্রিকার ডিক্লারেশনও নেন। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রুবেল আর প্রকাশক হন বরকত। এ ছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও তারা কব্জায় নেন।

বিরুদ্ধ মতকে দমন করতে তারা স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে চরমপন্থায় একের পর এক জঘন্য নজির সৃষ্টি করেন তারা। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাস, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন তারা। এরপর একের পর এক বিভিন্ন সরকারি সংস্থা দখল করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। যাকে খুশি তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করতেন। তাদের আক্রমণের শিকার অনেকে শহর থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যান।ফরিদপুরের বাইরেও খুলনা, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, পটুয়াখালী, শেরপুর, সিলেট, গাজীপুর ও দিনাজপুরেও ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের।

গ্রেফতারের পর ঢাকায় সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা এসব জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, জবানবন্দিতে অন্যান্য আরও অনেক সহযোগীর নামও বলেছেন তাঁরা। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং মামলায় সর্বশেষ ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিনে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ওরফে ফারহান এবং জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ঢাকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, রুবেল-বরকতের জন্ম হঠাৎ করে হয়নি। আশ্রয়-মদদদাতাদের কারণে তাদের উত্থান হয়েছে। তাদের দাপটে আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীরা কোণঠাসা হয়েছিল। সকলকেই আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে ক্ষমতা পেলেই কেউ যা খুশি তা-ই করতে না পারে।

ফরিদপুরের জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুরের বিভিন্ন উন্নয়নে যেসব কর্মকা- অনুমোদন করেছেন তার সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছে। তার অভিযোগ, এ লুটপাটে বরকত-রুবেলকে ব্যবহার করেছেন স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার ভাই খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর ও তার এপিএস ফুয়াদ।

এখন তাদের আটক করে সবার সম্পদের হিসাব নিলেই মূল খবর বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো বলেন বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পর্দা দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রীর ভাই বাবর ও এপিএস ফুয়াদ সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি বরকতের শ্বশুর ও তার শ্যালকদের চাঁদাবাজি ও জমি দখলের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, দখলদারদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যার যার সম্পত্তি, তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এছাড়াও যে সকল সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জন করেছে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার আহবান জানান।

 
Electronic Paper