কর্ণফুলীতে সক্রিয় ফার্নেস অয়েল চোরাই সিন্ডিকেট
আরিচ মাহমুদ
🕐 ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০২০
কর্ণফুলী নদীকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের চোরাই সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে আনা জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) বিক্রি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই। কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানরত জাহাজে অবৈধভাবে বিক্রি করছে এসব জ্বালানি তেল। পাশাপাশি সড়ক পথেও জ্বালানি তেল পরিবহন করে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে এ সিন্ডিকেট। এদের দাপটে সরকারি পর্যায়ে ফার্নেস অয়েল বিক্রি কমেছে ৬৪ শতাংশ। সম্প্রতি র্যাব কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে এক মাসের ব্যাবধানে দুটি চালান আটকের পর বেরিয়ে আসে জ্বালানি তেলের চোরাই সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের তথ্য।
র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, বিদেশ থেকে চোরাইপথে আনা ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়ার সময় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। চোরাই ফার্নেস অয়েল বহনকারী দুটি ট্যাংক লরিও আটক করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে শিকলবাহা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই সিন্ডিকেটের এ তিনজনকে আটক করা হয়। আসামিদের কর্ণফুলী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধিন জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানিগুলো ডিপো থেকে ফার্নেস অয়েল বিক্রি করে ৩৪ টাকা লিটার প্রতি। আর এ চোরাই সিন্ডিকেট ফার্নেস অয়েল বিক্রি করে লিটারপ্রতি মাত্র ২৪ টাকা দরে। জ্বালানি তেলের চোরাই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়ায় কমেছে সরকারি পর্যায়ে তেল বিক্রি।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে জ্বালানি তেলের চোরাই সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে ফার্নেস অয়েল বিদেশ থেকে এনে বিক্রি করছে। লোকবলের অভাবে এ চোরাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিপিসি। এ প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিবহন) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ চোরাই সিন্ডিকেট অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করছে। আমরা তাদের ধরতে পারছিলাম না।
এখন আইন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ চক্রের কয়েকজনকে ধরেছে। তদন্তে আরও বিস্তারিত বের হবে আশা করি। এদের কারণে সরকারি পর্যায়ে (পদ্ম, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানি) ফার্নেস অয়েল বিক্রি কমেছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বিপিসির ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। চোরা কারবারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় বিপিসির জ্বালানি তেল বিক্রি কমেছে। এসব অবৈধ চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানে এ সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে গত মাসে আটক হওয়া দুই লরি ফার্নেস অয়েলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে নগরীর কর্ণফুলী থানায়। এ ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার হলেও মঈন উদ্দিন নামের একজন এখনো পলাতক রয়েছে বলে জানান কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাইল হোসেন।
ওসি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৭ এর কর্মকর্তারা জ্বালানি তেলের চোরাই সিন্ডিকেটের তিনজনকে গ্রেফতার করে থানায় সোপর্দ করেছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা রুজু হয়েছে।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা এলাকার চোরাই তেল সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেয় শুক্কুর প্রকাশ তেল শুক্কুর ও মহব্বত নামে দুজন। কর্ণফুলী নদীর উত্তরে অর্থাৎ চট্টগ্রাম নগরে এ সিন্ডিকেটে রয়েছে জাবেদ, রাজ্জাক, মিজান প্রকাশ বাংকার মিজান ও মান্নান নামের কয়েকজন। মূলত বাংকার মিজান অবৈধভাবে বিদেশ থেকে ফার্নেস অয়েল নিয়ে আসে। অবৈধভাবে আসায় সরকার এ ফার্নেস অয়েল থেকে কোনো রাজস্ব পায় না। এসব অবৈধ ফার্নেস অয়েল জাবেদ, মান্নান এবং রাজ্জাকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প-কারখানা এবং সমুদ্রগামী জাহাজে বিক্রি করে মিজান।
চট্টগ্রামের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার বেশ কয়েকটি বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। সব ট্রলারে প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল প্রয়োজন হয়। আমরা সাধারণত যমুনা অয়েল কোম্পানি থেকে জাহাজের জ্বালানি কিনে থাকি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের চোরাই সিন্ডিকেটের একটি চক্র আমাকে তাদের কাছ থেকে ফার্নেস অয়েল কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন ফার্নেস অয়েলের সরকারি দাম ছিল ৪২ টাকা লিটার। এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় সরকারও ফার্নেস অয়েলের দাম কমিয়েছে।