ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেকড় ছেড়ে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৫৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০২০

ঈদের ছুটি শেষ। সরকারি-বেসরকারি অফিসও খুলেছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যেই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে গিয়েছিলেন হাজারও কর্মজীবী মানুষ। ছুটি শেষে আবারও তারা কর্মস্থল ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। এ কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়ক, নৌ-বন্দরসহ অন্যান্য টার্মিনালে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। ফেরি ঘাটগুলোতেও দেখা গেছে মানুষের ভিড়। তবে অধিকাংশ পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর-গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার থেকেই ঢাকায় যাত্রীরা ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।

সদর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় ফেরা অধিকাংশ লঞ্চেই ছিল কর্মজীবী মানুষের ভিড়। লঞ্চের ডেক থেকে শুরু করে কেবিন এমনকি কেবিনের সামনের গলিপথেও মানুষের চাপ দেখা গেছে। টার্মিনালের প্রতিটি পন্টুনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো নমুনা দেখা যায়নি। অধিকাংশ যাত্রীর মুখে ছিল না মাস্কও।

বরিশাল থেকে আসা যাত্রী নাজমুল আলম বলেন, সোমবার অফিস খুলেছে। স্যারকে বলে একদিন অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) অফিসে যোগ দিতে হবে। তাই লঞ্চে করে চলে আসলাম। লঞ্চে তো মানুষের জন্য পা রাখার জায়গা নেই। কোনোভাবে ডেকের এক কোণে একটু বিছানা করে নিয়েছি। রাতে বৃষ্টিও হয়েছে। নির্ঘুম রাত কেটেছি। মানুষের চেঁচামেচি আর প্রচণ্ড ভিড় দেখে মনে হচ্ছে যেন করোনা বলতে কিছুই আর নেই।

পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন, ঈদের আগ মুহূর্তে অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ প্রায় একসঙ্গেই ঢাকা ছাড়লেও ফেরার সময় আলাদা আলাদাভাবে ফেরেন। অনেকেই ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটি যোগ করে নেন। কেউ কেউ ঈদ শেষে অফিস ধরতে ঢাকায় ফিরলেও তাদের পরিবার বাড়িতে রেখে আসেন। সে কারণে ফেরার সময় সাধারণত যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম থাকে।

যশোর থেকে ঢাকায় ফিরেছেন সরকারি চাকরিজীবী আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সোমবার অফিস খুলেছে। ঊর্ধ্বতন স্যারকে বলে আরও দুই দিন ছুটি নিয়েছি। টিকিট পেয়ে ঢাকায় চলে এসেছি। বউ-বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে এসেছি। আরও কয়েক দিন বেড়াবে। এরপর আসবে। কারণ এখন আসলে যাত্রীদের যে চাপ তাতে দুর্ভোগের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, একদিন আগেও বাসের টিকিট কাটতে গিয়ে পাইনি। তাই কয়েকজন মিলে প্রাইভেট কার ভাড়া করে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। এছাড়া, বিকল্প কোনো উপায় নেই। সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ নানা মাধ্যমে ঢাকা ফিরছে।

একুশে এক্সপ্রেসের কাউন্টার সহকারী মাইদুল ইসলাম বলেন, আজ (মঙ্গলবার) যাত্রী আসছে বেশি। বুধবার যাত্রী চাপ আরও বাড়বে। আগামী এক সপ্তাহ যাত্রী আসবে। তবে দুই এক দিন ভিড় বেশি থাকবে।

এদিকে, ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরার পাশপাশি অনেককে আবার ঢাকা ছাড়তেও দেখা গেছে। যারা ঈদে বিশেষ ছুটি পাননি, কিংবা ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা থাকতে হয়েছে মূলত তারাই বাড়ি ফিরছেন এখন। তবে এই যাত্রীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন গাবতলী এনা কাউন্টারের ম্যানেজার মহিউদ্দিন মিয়া।

তিনি বলেন, ঈদের পরবর্তী সময়ে ঢাকায় ফেরা মানুষের সংখ্যা বেশি। এ সময় ঢাকাগামী গাড়িতে ভিড় থাকে বেশি। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে যে গাড়িগুলো যাচ্ছে সেগুলো অনেকটা ফাঁকাই থাকে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যাত্রীদের চাপ কিছুটা বাড়ছে। তবে ফেরি ঘাটগুলোতে ভিড় থাকার কারণে জট লেগে যাচ্ছে। আমরা সব পরিবহন মালিকদের বলে দিয়েছি কোথাও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে পরিবহনে যাত্রী নেওয়া যাবে না।

 
Electronic Paper