ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রায় সেপ্টেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৮

আজ ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও একটি শোকাবহ দিন। ২০০৪ সালের এদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এ  হামলা চালানো হয়।

ন্যক্কারজনক এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন চার শতাধিক নেতাকর্মী। আহতদের তালিকা থেকে বাদ যাননি সাংবাদিক-পুলিশ। উপর্যুপরি শক্তিশালী গ্রেনেড হামলার ফলে রক্তের স্রোত বইয়ে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের রাজপথে। গ্রেনেডের আঘাতে নিহত-আহতদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক নারকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে তার দেহরক্ষী প্রাণ হারান। আহত ব্যক্তিদের অনেকে এখনো শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। সেদিনের সেই বর্বরতার কথা এখনো মনে পড়লে শরীর আঁতকে ওঠে। হামলার ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে ২২ আগস্ট মামলা দায়ের করে। এছাড়া আরও দুটি মামলা হয়। এসব  মামলায় আসামি করা হয় ৫২ জনকে। এ সময় মামলায় তদন্তে সাক্ষী করা হয় ৫১১ জনকে। এর মধ্যে ২২৫ সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে হাজির করতে পেরেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তাদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই ৪৯ (তিন আসামির অন্য মামলায় ফাঁসি হয়) জন আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছি।
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদিন বলেন, ৪৯ আসামির সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এক নয়। তাছাড়া ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে হাজির করতে পেরেছে। তিনি দাবি করেন, ‘প্রথমে এই মামলার বিচার শুরুর পর ৬১ জনের সাক্ষী নেওয়া হয়। তারপর নতুন করে আবারও মামলার তদন্ত শুরু করে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে এই মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, রায় আগামী নির্বাচনের আগেই ঘোষণা হবে এটা নিশ্চিত। বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি হলে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের জবাব দেওয়া হবে। সেটা দু-এক কার্যদিবসে শেষ হবে। আগামী মাসেই রায়ের তারিখ নির্ধারণ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
১৪ বছর পর ওই হামলার রায় হতে যাচ্ছে। মামলার এজাহার, চার্জশিট ও সাক্ষীদের জাবনবন্দিতে এটা স্পষ্ট যে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ওই দিন এই নারকীয় ঘটনা ঘটায়। কিন্তু এর পেছনে ছিল বিরাট ষড়যন্ত্র ও সরকারের মদদ। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের তদন্তে প্রথম জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অধিকতর তদন্তে প্রকাশ পায় হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি। মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা হয় হাওয়া ভবনে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ এটি।
মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালের আগস্টে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে (পরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে বলে তারা জানতে পারেন। এরপর তারা একটি বৈঠক করেন এবং তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনিসহ অন্য নেতারা আল মারকাজুলের গাড়িতে করে মারকাজুলের কর্মকর্তা আবদুর রশিদকে নিয়ে হাওয়া ভবনে যান। হাওয়া ভবনে হারিছ চৌধুরী, তখনকার মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার ও ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমকে উপস্থিত পান। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান আসেন। তখন তিনিসহ জঙ্গিরা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা করার জন্য সহায়তা চান। উপস্থিত ব্যক্তিরা প্রশাসনের মাধ্যমে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সেপ্টেম্বর মাসেই এ মামলায় রায় আসবে। লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। এই একজনের পক্ষে শুনানি শেষ হলেই মামলা রায়ের জন্য প্রস্তুত হবে। ২১ আগস্ট ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার তথা দেশবাসী অপেক্ষা করছেন এ রায়ের জন্য।

 
Electronic Paper