ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঈদে ঘরে ফেরা

আনন্দে ম্লান ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৮

পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে আগামীকাল বুধবার। সে হিসাবে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল সোমবার। শেষ কর্মদিবসে অফিসে হাজিরা দিয়ে যে যত দ্রুত পেরেছেন অফিস ত্যাগ করেছেন। উদ্দেশ্য গ্রামের বাড়ি যাওয়া।

সেখানে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে একত্রে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। গতকাল ট্রেন, বাস, লঞ্চ ছাড়াও প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়িমুখে ছোটেন মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় মোটরসাইকেলের আধিক্য লক্ষ করা গেছে। ব্যাগ-ব্যাগেজ বেঁধে একাকী কিংবা স্ত্রী-সন্তানকে তুলে শত শত মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়েন অনেকেই। নাড়ির টানে নগরবাসীর এই ঘরে ফেরায় কার্যত ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। মহাসড়কগুলোতে বড় ধরনের যানজট না থাকলেও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বেশিরভাগ স্থানেই ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। গতকাল মহাসড়কের নয়াডিঙ্গি, গোলড়া, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুরি, মহাদেবপুর, বরংগাইল, শিবালয় এবং উথুলি পয়েন্টে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের একাধিক পোশাক কারখানা এদিন একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় বাড়তি চাপ পড়ে এই মহাসড়কে।  
একই চাপ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। গতকাল সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী গাড়ির চাপ ছিল অনেক। তারপরও গত দুদিনের তুলনায় গতকাল চাপ ছিল কম। হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ কম ছিল। মহাসড়ক স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মোট ২২টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এদিন মোট ৬৮টি ট্রেন ঢাকা ছাড়ার কথা জানিয়েছে কমলাপুর স্টেশন। এর মধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর, ৪টি ঈদ স্পেশাল, বাকি ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল সার্ভিস।
অন্যদিকে ঈদযাত্রার প্রতিদিনের মতো গতকালও কয়েকটি ট্রেন তিন-চার ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যাচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়ে যায় ৯টা ১০ মিনিটে।
গতকাল রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তিন ঘণ্টা পর ৯টার দিকে ছেড়ে যায়। একইভাবে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস কামলাপুর থেকে ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাড়ে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর সকাল সাড়ে ৮টায়। এ ছাড়া চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নতুন করে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ৯টায় থাকলেও বিলম্ব হওয়ায় সময় দেওয়া হয় ১২টা ১০ মিনিটে এবং লালমনিরহাটগামী লালমনি ঈদ স্পেশাল ৯টা ১৫ মিনিটে সময় থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টা করা হয়েছে। মেডিকেল ছাত্রী অনামিকা বলেন, তিনি এবার গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করবেন। বাড়ি যেতে কষ্ট হলেও বাড়ি যাওয়ার পর সব কষ্ট ম্লান হয়ে যায়, যখন বাড়িতে পৌঁছে বাড়ির মানুষের মুখগুলো দেখি। বাড়ি যাব একথা শোনার পর তারা অপেক্ষায় আছে কখন বাড়িতে পৌঁছব। কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে ট্রেন কিছুটা বিলম্বে চলাচল করছে। এ ছাড়া কিছু ট্রেন আছে যেগুলো একটি রেকে চলাচল করছে। ফলে একটি ট্রেন বিলম্ব হলে দ্বিতীয়টি বিলম্ব হয়। তিনি বলেন, ভিড়ে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। ট্রেনের ছাদে ওঠা শত চেষ্টায়ও বন্ধ করতে পারছি না। এমন অবস্থায় কোনো দুর্ঘটনা হলে ভয়ানক পরিস্থিতি হবে।
এদিকে গতকাল সদরঘাটে ছিল উপচেপড়া ভিড়। যাত্রী বেশি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। উপচেপড়া ভিড়ের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি আর অভিযোগেরও যেন শেষ নেই। তার পরও বাড়ি যাবে সে স্বস্তি চোখমুখে লক্ষ্য করা গেছে। গত শনিবার থেকে ঈদের বিশেষ লঞ্চ চালু হয়েছে। এবার সরকারি ছয়টি স্টিমার আর ১৫০-এর বেশি বেসরকারি লঞ্চ ঈদের যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। সদরঘাটে পরিদর্শনে আসা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত ১০ আগস্ট থেকে শুরু করে অধিকাংশ মানুষ বাড়ি পৌঁছে গেছে, বর্তমানে পোশাককর্মীদের বাড়ি ফেরার বাড়তি চাপ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যাত্রী নিরাপত্তা ও হয়রানি বন্ধে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই হয়ে যাতে কোনো লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে না পারে সেদিকে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যাত্রীদেরও অসচেতনতা, বিশেষ করে ডেকের যাত্রীরা কোনো কিছুই না মেনে যার যার পছন্দের লঞ্চে দলবেঁধে উঠতে থাকে। বাধা দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সবার সমন্বয়ে এবার ঈদে সুষ্ঠুভাবে লঞ্চ পারাপার করার চেষ্টাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

 
Electronic Paper