পশুর হাটে মানতে হবে পাঁচ ফুট দূরত্ব
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:১৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৮, ২০২০
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটের জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রদত্ত নির্দেশনা অবশ্যই মানতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, একটি পশু থেকে আরেকটি পশুর দূরত্ব পাঁচ ফুট থাকতে হবে। এছাড়াও পশুর হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন, মুখে মাস্ক না থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতাকে হাটে প্রবেশ করতে না দেওয়া, হাটের প্রবেশ পথে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্র স্থাপন, শুধু স্বাভাবিক তাপমাত্রা (৯৮ দশমিক ৪ ফারেনহাইট) সম্পন্ন ব্যক্তিদের হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া এবং অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় উদ্বুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। পরামর্শগুলো চূড়ান্ত হলে তা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে কোরবানির পশুর হাট থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চঝুঁকি তৈরি হতে পারে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও পরামর্শ মেনে চললে হয়তো সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে যেসব পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আরও রয়েছেÑহাটের জন্য খোলা জায়গা নির্বাচন, হাট বসানোর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী যেমন মাস্ক, সাবানসহ জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী পর্যাপ্ত রাখার ব্যবস্থা, পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা, পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, হাটের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ প্রদান যেমন জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয়, মাস্কের সঠিক ব্যবহার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার, হাত ধোয়া ও জীবাণুমুক্তকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে বোঝানো।
হাট কমিটির কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং কেউ অসুস্থ হলে দ্রুততম সময়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। গণশৌচাগারগুলোতে হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল সাবান, সাধারণ সাবান এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মূল্য প্রদান ও বের হওয়ার সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা, সতর্কতার সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনে এক মিটার বা দুই হাত দূরত্বে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা এবং হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সংখ্যা ও তাদের চলাচল সীমিত করা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে হাটে এসে পশু কেনার চাইতে অনলাইনে কেনায় উদ্বুদ্ধ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ তৈরি হচ্ছে।
এদিকে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে রাজধানীর গাবতলীতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই একটু ভালো দামের আশায় খামারিরা তাদের পশু নিয়ে আসেন এই হাটে। তবে ঈদের দিন-তারিখের আনুমানিক তারিখ জানা গেলেও এবার এখনো শুরু হয়নি গাবতলী পশুর হাটের প্রস্তুতি। গতকাল বুধবার রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে হাটে কিছু পশু এলেও তা স্বাভাবিক সময়ের মতো বলেই দাবি হাটের ব্যবসায়ীদের। ঈদে কোরবানির পশুর বাজার শুরু হতে আরও সময় লাগবে বলে মন্তব্য তাদের। একই সঙ্গে আরও এক সপ্তাহ পরে ঈদের হাটের প্রস্তুতি শুরু হবে বলে জানিয়েছে গাবতলী পশুর হাট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে হাটের প্রস্তুতি এখনো শুরু হয়নি। এটা প্রতিবার ঈদের এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়। তবে এবার করোনার জন্য সময় আরও বেশি লাগবে। এছাড়া এবার এখনো হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি। ইজারা সম্পন্ন হওয়ার পরেই মূল প্রস্তুতি শুরু হবে। সব মিলিয়ে এখনো প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে প্রস্তুতি শুরু করতে।