ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি এনডিএফের

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৭:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০২০

স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও মিডিয়া কর্মীদের সুরক্ষা, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা, কোভিড-১৯ এর পরীক্ষার নির্ধারিত ফি, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, লে-অফ, ছাঁটাই, চাকরিচ্যুতি বন্ধ, অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া ও বছরে এক বা একাধিকবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)।

দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখা এ কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেট কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মো. সুরুজ আলী।

সমাবেশে বক্তারা সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সংস্থাসমূহের নীতি নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলকে অলাভজনক করে রাখার ষড়যন্ত্রেও মধ্য দিয়ে বন্ধ করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে পাটকল বন্ধের জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দক্ষ ও সৎব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানায় শিল্প কারখানাটি আধুনিকায়নের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, পাটকল বন্ধ ও শ্রমিকদের কর্মহীন করে শ্রমিক পরিবার এবং পাটের উপর নির্ভরশীল পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষুদ্র শিল্প, পাটচাষি ও পাট ব্যবসায়সহ প্রায় কোটি জনগণের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন আমদানিকৃত বিদেশি কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল নানা শিল্পকে জনগণের টাকায় প্রণোদনা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিলেও সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সংস্থাসমূহের নীতি নির্দেশে এবং দালাল পুঁজিপতিদের লুটপাটের স্বার্থে দেশের কাঁচামাল নির্ভর সম্ভাবনাময় পাটকলসমূহ বন্ধ করে দিয়েছে।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চলমান মহামারী দুর্যোগময় মুহূর্তে শ্রমিক-কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে সরকার শ্রমিকদের অন্ধকারে, কৃষকের পাটের স্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। নেতৃবৃন্দ করোনা মহামারি মোকাবেলায় ‘সরকারের দেখি না কি হয়’ নীতির কঠোর সমালোচনা করে বিজ্ঞানী, ভাইরাস ও মহামারি বিশেষজ্ঞ তথা মহামারি মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও মিডিয়া কর্মীদের সুরক্ষা, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা, কোভিড-১৯ এর পরীক্ষার নির্ধারিত ফি বাতিল করে সর্বাত্মক পরীক্ষা, চিহ্নিতকরণ, পৃথকীকরণ ও সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানান। ‘আপনার সুরক্ষা, আপনার হাতে’ স্লোগানকে সামনে এনে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চরমভাবে ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করা যাবে না।

নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি পাস হওয়া বাজেটের সমালোচনা করে জনস্বার্থ ও চিকিৎসা, কৃষি, দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর শিল্পসহ ব্যাপক কর্মহীন শ্রমিক-জনগণের রক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিয়ে গতাানুগতিক বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করেন। বাজেটটি জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য’ তথা এসডিজিকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি অবাধ বিনিয়োগের নামে লুটপাট করার ব্যবস্থাকে আরও বেপরোয়া করবে।

বক্তারা আরও বলেন, দীর্ঘ সময় সাধারণ ছুটির নামে কার্যত দেশ অচল থাকায় এবং পরবর্তী সময়েও সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক অর্থনীতি চালু না হওয়া সত্ত্বেও সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল প্রদানসহ অনেক ক্ষেত্রে জুলুম শুরু করেছে। উপরন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতনের সময়ে দেশে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য কমিয়ে করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে সরকার বছরে একাধিকবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ও জ্বালানি তেলে লাভ করে চলেছে। এ অবস্থায় জনস্বার্থে দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বস্তরের জনগণকে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিংয়ের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। নেতৃবৃন্দ পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে আন্দোলনরত দুজন পাটকল শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার ও অন্যান্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি দাবি করেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মহামারির সময়ও থেমে নেই আমেরিকা-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, চীন-ভারত, নেপাল-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে পুলিশ হেফাজতে হত্যা, প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা-গুলিবর্ষণ, গ্রেফতার, সৌদি জোটের ইয়েমেন হামলা, ইসরাইলের সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে হামলা। নেতৃবৃন্দ বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণকে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে সমাজতন্ত্র ও আমাদের মত নয়া উপনিবেশিক আধাসমান্ততান্ত্রিক দেশগুলিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট শহর পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি খোকন আহমদ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ছাদেক মিয়া, সিলেট জেলা প্রেস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এ কে আজাদ সরকার, সিলেট জেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হোসেন প্রমুখ।

 
Electronic Paper