জেলে বসে ডাকাতির ছক
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০২০
বিভিন্ন সময় চুরি-ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার পর তাদের পরিচয় হয়। সেখানে বসেই বড় কোনো শোরুমে ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। জেল থেকে বেরিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৩ জুন মধ্যরাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন ৫৭/১৫ পান্থপথের ওয়ালটন প্লাজা (এসটি) শোরুমের মালামাল ডাকাতি করে। এরপর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে শেরেবাংলা থানার পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বছিলা থেকে মো. রবিউল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে তার তথ্যের ভিত্তিতে সুমন, রানা ও সাথী নামে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে রবিউল ১৬৪ ধারায় আদালতে ডাকাতির ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সাত-আটজন। তাদের ডাকাতির পরিকল্পনা হয় জেলে বসেই। ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতি হওয়া ১৮টি ওয়ালটন ফ্রিজ এবং তিনটি এলইডি টেলিভিশন উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, ডাকাতির মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে ২৪টি ওয়ালটন ফ্রিজ, পাঁচটি এলইডি টেলিভিশন, একটি মোবাইল ফোন এবং ড্রাইভারের সাড়ে চার হাজার টাকা ও হেলপারের ৮০০ টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা।
ডাকাতির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে ডিলারের কাছে (রহমত ইলেকট্রনিকস) পাঠানোর উদ্দেশ্যে ওয়ালটন কোম্পানির নিজস্ব পরিবহনে (ঢাকা মেট্রো-ড-১১-৭০-৩৫) শোরুমের কর্মচারী জিহাদ হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, মো. তারেক হোসেন মারফত মালামাল উঠানো হয় এবং পণ্যের চালান কপি ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন (৩০) এবং হেলপার মিরাজের (১৯) কাছে হস্তান্তর করে শোরুম কর্মচারীরা চলে যান। তারা স্থান ত্যাগ করার পরপরই একটি খালি পিকআপযোগে সাত-আটজন দুষ্কৃতকারী এসে তাদের হাতে থাকা চাপাতির ভয় দেখিয়ে ওয়ালটনের ড্রাইভার-হেলপারকে গাড়িতে ওঠায় এবং বিভিন্ন জায়গায় মালামাল নামিয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। ঘটনার পর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হলে মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন এবং আলামত উদ্ধারে কাজ শুরু করে শেরেবাংলা নগর থানা টিম।
ডিসি হারুন আরও জানান, মামলার ঘটনার তেমন কোনো ক্লু না থাকায় প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরার সহায়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ যাচাই-বাছাইসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই রবিউল ইসলামকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে আসল রহস্য উন্মোচন করে। ডাকাতিতে চার সহযোগী মো. শাহজাহান, মেহেদী হাসান মৃধা ওরফে হাসান, মো. রনি, ও আব্দুর রহিম ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশ কর্তৃক আটকের পর জেলহাজতে রয়েছে। তথ্য যাচাইয়ের পর তদন্ত টিম ময়মনসিংহ থেকে হাসান ও রনির হেফাজতে থাকা দুটি ফ্রিজ ও দুটি টেলিভিশন উদ্ধার করে। পরে রবিউল ইসলাম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
রবিউলের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৪ জুলাই ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারী সুমন ও রানাকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাউচর আরশিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার ও একটি টেলিভিশন উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যমতে, সাভার-আশুলিয়ার মেহেদী হাসান মৃধার দুই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দুটি ফ্রিজ জব্দ করা হয়। এছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাথী নামে একজনকে গ্রেফতার ও তার দোকান থেকে ছয়টি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়।
ডাকাতরা আন্তঃবিভাগীয় ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। জেলহাজতে থাকাকালে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানেই ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান ডিসি হারুন।