ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাতের পণ্যের মেমসাহেব

শাহনেওয়াজ খান
🕐 ৯:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০২০

সুনামগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পৌর মিনি মার্কেট। এখানেই একটি বুটিক আউটলেট যার নাম মেমসাহেব। নতুন গড়ে ওঠা এই শো-রুমে হাতের কাজের পোশাক, গহনা ও ঘর সাজানোর জিনিস নজর কেড়ে নেয়। অত্যন্ত নান্দনিক প্রতিটি পোশাক, গহনা, চারু ও কারুপণ্য। আছে বাঁধাই চিত্র ও ঘর সাজানোর পণ্য। প্রতিটি পণ্যেই বৈচিত্র্য ও আন্তরিকতার ছাপ সুস্পষ্ট। মেমসাহেব নামের প্রতিষ্ঠানটি যিনি গড়ে তুলেছেন তিনি এই শহরেরই একজন তরুণ উদ্যোক্তা। এখানেই বড় হয়েছেন, এখানেই পড়ালেখা। সুনামগঞ্জ তথা দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করে তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তার নাম রোকসানা আলম শশী।

চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। কিন্তু শুরুটা অত সহজ ছিল না। শশী তার ভালো লাগার মাধ্যমকে অবলম্বন করেই হাত দেন এই বুটিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে। শশীর বড় পুঁজি তার আত্মপ্রত্যয়। শুরু করেছিলেন একটি দুটি হাতের কাজ দিয়ে। তার প্রধান উপজীব্য রঙ-তুলি। মনের ক্যানভাসে ধারণ করা ছবি কাপড়ে ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন। যাত্রা শুরু হয় জামায় হাতে আঁকা ছবি (হ্যান্ড পেইন্ট) দিয়ে। থেকেই ছবি আঁকার যে ঝোঁক সেই শৈল্পিক সত্তাকে উপস্থাপন করেছেন নান্দনিকতায়।

জামার ডিজাইন, কাপড় কাটা ও মেশিনে সেলাই তিনি নিজেই করেন। এরপর সেই জামায় রঙ-তুলির আঁচড় দেন। ধীরে ধীরে তার তৈরি চারু ও কারুপণ্য এবং পোশাকের চাহিদা বাড়তে থাকে। বিক্রি বাড়ে, বেড়ে যায় ব্যস্ততা। পণ্যকে বাইরের পরিম-লে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নেন প্রযুক্তির সহায়তা। ফেসবুকে পেজ খোলেন; নাম দেন মেমসাহেব, যা তার প্রতিষ্ঠানের নাম। নিজের পণ্যের মডেল নিজেই হয়েছেন। যুক্ত হয়েছেন হস্তশিল্প সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ বাংলাদেশ হস্তশিল্প অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। দেশের নারী উদ্যোক্তা সংগঠন উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অব বাংলাদেশ (ডব্লিউইবিডি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। নিজের পণ্যের নিজেই মডেল প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছেন।

হাতে আঁকা ছবির পাশাপাশি যুক্ত করেছেন ব্লকের কাজ, সুঁই-সুতোর কাজ, স্ক্রিনের কাজ। তাতে এনেছেন কড়ি কাচ পুঁতির সমন্বয়। তার সৃষ্টির বহরে যোগ হয়েছে কুর্তা, শাড়ি, ব্লাউজ, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাক। সম্পূর্ণ দেশীয় ধারণায় তৈরি বাংলার ঐতিহ্যম-িত গহনা। পোশাকে এনেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাসের কাব্যের ছাপ, খনার বচন। ঘর সাজানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে করা ফ্রেমে বাঁধাই ছবি, অ্যামবোস পেপারে অ্যাক্রেলিক পেইন্টে আঁকা ছবি, সুপারি খোলের জিনিসের ওপর অ্যাক্রেলিক পেইন্টে নকশা। এঁকেছেন ফোক আর্ট, বিমূর্ত, আফ্রিকান বহেমিয়ান, বুদ্ধ, প্রকৃতি এবং অত্যন্ত উঁচু মানের ছবি সাইন অব পিস।

অনলাইনে গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অফলাইনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন শশী। তার এই স্বপ্ন সফল হয় গত মার্চ মাসে (মার্চ, ২০২০)। সুনামগঞ্জ শহরে পৌর মিনি মার্কেটে গড়ে তোলেন মেমসাহেব নামের আউটলেট। করোনা পরিস্থিতিতে মন্দা এলেও তিনি আশাহত হননি।

উদ্যমী তরুণী রোকসানা আলম শশী এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশীয় অনেক পণ্যই ঝুঁকির মুখে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে প্রায়। কিছু পণ্য কারও না কারও হাত ধরে ঠিকই নিজের জায়গা দখল নিচ্ছে। যেগুলো বিলুপ্তির পথে সেগুলোকে তুলে আনতে চাই। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেশীয় পণ্য নিয়ে হাজির হই আপনাদের সামনে। আপনারাই আমাদের সাহস, আমাদের অবলম্বন। ব্যতিক্রমী ও আরও নান্দনিক দেশীয় ঐতিহ্যসমৃদ্ধ পণ্য যাতে আগামী দিনগুলোতে আপনাদের সামনে আনতে পারি সেই দোয়া কামনা করি।

শশী স্বপ্ন দেখেন, তার প্রতিষ্ঠান আরও বড় হবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই উদ্যোগে শামিল হয়ে ভাগ্য বদলে হবে অনেকেরই।

 
Electronic Paper