পুলিশের জালে ভুয়া মৃত্যুসনদ বিক্রেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:২০ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৫, ২০২০
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একজন খ্যাতনামা মিডিয়া ব্যক্তিত্বের কাছে একটি ফোনকল আসে গত ২৩ মে। জানা যায় তার বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এই দূর্যোগে প্রকৃতির এ এক নির্মম আঘাত! কিইবা করার আছে! যাই হোক, এখন মৃতদেহ দাফন করতে হবে। কিন্তু লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য কিছু টাকা দরকার এই মুহূর্তে।
বাবার মৃত্যুর খবর দেওয়ার পর এক পর্যায়ে তার কাছে পাঠানো হয় তার বাবার মৃত্যুসনদের একটি কপি এবং টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে দেওয়া হয় একটি বিকাশ নম্বর। যিনি এই মৃত্যু সনদের কপি ও টাকার জন্য বিকাশ নম্বর দিয়েছেন তার নাম মো. শাহজাদা হাওলাদার। একজন প্রতারক তিনি।
তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনার জোনাল গোয়েন্দা দল। নতুন নতুন কৌশলে অভিনব পন্থায় এভাবেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল সনদের মতো ভুয়া মৃত্যুসনদ তৈরি করে নিকটাত্মীয় মারা গেছে বলে লাশ দাফনের জন্য স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল বেশকিছু দিন ধরে। পুলিশের কাছে এমন তথ্য আসার পর তাকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রমনার জোনাল গোয়েন্দা দলকে নিবিড় অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেন। চলতে থাকে গোয়েন্দা পুলিশের সার্বক্ষণিক গোপন তৎপরতা। চলে প্রযুক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও নিরন্তর বিশ্লেষণ। অবশেষে গোপন, প্রকাশ্য ও প্রযুক্তির বিন্যাশ সডুকুর মতো মিলিয়ে ফেলে রমনার জোনাল গোয়েন্দা দল। নিরলস পরিশ্রম করে ১২ দিনের মাথায় ভুয়া সনদের মাধ্যমে এই বিকাশ প্রতারককে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয় পুলিশ।
৩ জুন সেই সূত্রের ছকে জীবন্ত মানুষের মৃত্যুসনদ তৈরির মূল হোতা শাহজাদকে রামপুরা থানাধীন একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একাধিক ভুয়া মৃত্যুসনদ, ডাক্তারের সিল এবং কয়েকটি মোবাইল সিম জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে এই ধরনের প্রতারণার কাজে বহুদিন আগ থেকে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তার স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, এই ঘটনার কিছুদিন আগে সে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের একজন উপদেষ্টাকে একই ভাবে প্রতারণা করে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে ঘটনা সত্যতা স্বীকার করেছে সে। এই বিষয়ে প্রতারক শাহজাদার বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এর সাথে আরো কেউ জড়িত কিনা সেই বিষয়ে তদন্তে রয়েছেন গোয়েন্দারা।