করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা
হাসপাতালকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৩, ২০২০
দেশে প্রতিদিন করোনা রোগী বাড়ছে। তাতে ক’দিন পর কোভিড ঘোষিত হাসপাতাল ছাড়াও সাধারণ হাসপাতালেও রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য দেশের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশক করেছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে শুধু জরুরি সেবা রেখে সব ধরনের সাধারণ সেবা আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। এরপর সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালকেই কোভিড হাসপাতালে পরিণত করতে হবে ব্যাপক হারে।
বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, দিন দিন করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। এ হারে রোগী বাড়তে থাকলে দেশের সব হাসপাতালকেই করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগাতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক জাতীয় পরামর্শক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন জানান, অতীতে যা ঘটে গেছে তা গেছেই। এবার বর্তমান ও সামনের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। যে হারে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে তাতে সামনের দিনে হাসপাতালের দিকে মানুষের স্রোত আরও বেড়ে যাবে। সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে এখনই সব হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে শুধু জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সব ধরনের সাধারণ চিকিৎসা আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করে তাদের সবাইকে করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগাতে হবে।
হাসপাতালগুলোকে কীভাবে ঢেলে সাজাতে হবে সে সম্পর্কে অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা দেওয়ার সুবিধার্থে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন এ তিন জোনে বিভক্ত করতে হবে। নিশ্চিত কোভিড রোগীদের জন্য হবে রেড জোন। করোনা সন্দেহে মানুষ হাসপাতালে এলে তাদের ইয়েলো জোনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন তার কোভিড টেস্ট করতে হবে তিনি তা করবেন। কোভিড নিশ্চিত হলে রোগীকে হাসপাতালের রেড জোনে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। কোভিড-১৯ নিশ্চিত না হলে মুমূর্ষু রোগীকে গ্রিন জোনে রেখে জরুরি সেবা দিয়ে দ্রুত ছেড়ে দিতে হবে।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা চিকিৎসার জন্য দ্রুত সাড়ে ৫ হাজার বেডের আইসিইউ প্রস্তুত করতে হবে (প্রতি লাখ মানুষের জন্য তিনটি আইসিইউ বেড প্রতিটি হাসপাতালে)। হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, পর্যাপ্ত অক্সিমিটার (আঙুলের ডগায় রেখে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণায়ক যন্ত্র), পর্যাপ্ত ন্যাসাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা হাসপাতালেও অক্সিজেন, অক্সিজেন মাস্ক, অক্সিমিটার, ন্যাসাল ক্যানোলা লাগবে। তবে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে উপজেলা হাসপাতাল থেকে জেলা হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীকে কিছু দিন পরপর করোনা টেস্ট করতে হবে। এটা হতে পারে র্যাপিড টেস্ট। র্যাপিড টেস্টে পজিটিভ হলে সেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আরটি পিসিআর টেস্ট করে অধিকতর নিশ্চিত হতে হবে যে ওই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা পজিটিভ।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চারটি দলে ভাগ করতে হবে। একটি দলকে রিজার্ভে রাখতে হবে। অবশিষ্ট তিনটি গ্রুপ প্রতি ৮ ঘণ্টা পরপর শিফটে চিকিৎসা দেবেন। তাহলে তাদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে রিজার্ভ থেকে স্থান পূরণ করতে হবে। এভাবে হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা নতুন করে সাজানো হলে করোনা চিকিৎসা সঠিক গতিতে চলবে।