শঙ্কার মাঝেও স্বস্তি
মৃন্ময় মাসুদ
🕐 ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০
দুই মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর আজ খুলছে অফিস, কলকারখানা। সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে ট্রেন বাস লঞ্চ। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছে বহু মানুষ। একেবারেই সবকিছু স্বাভাবিক না হলেও গত কয়েক মাস আগের চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। এটাই বা কম কি? এতেই ‘স্বস্তি’ খুঁজে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ যেন শঙ্কার মধ্যেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচা!
যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ১৫ জুনের পর দেশে করোনা সংক্রমণ চূড়ান্ত উঁচ্চে পৌঁছাবে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকার কথা চিন্তা করেই মূলত সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শর্তসাপেক্ষে ৩১ মে থেকে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত আকারে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থায় খোলা থাকার ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলি এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ/সীমিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর ‘ঘরবন্দি’ অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কর্মজীবী মানুষ। তাদের ভাষ্য, জীবনের সঙ্গে জীবিকার কথাও ভাবতে হবে। এরকম আর কিছুদিন ‘ঘরবন্দি’ থাকলে তো না খেয়ে মরতে হতো।
নরসিংদীর একটি টেক্সটাইল কারখানার অ্যাকাউন্টস ও অডিট সেকশনে কর্মরত নাজমুল হাসান। করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে তিনি নিজ বাড়ি রংপুরে অবস্থান করছেন। টেলিফোনে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বাসায় আছি। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল বিকাশে মার্চ মাসের বেতন পেয়েছি। এরপর দুটি মাস পেরিয়ে গেল, ঈদ গেলো কিন্তু অফিস থেকে কোনো বেতন-ভাতা বা বোনাস পাইনি। সামাজিক অবস্থার কারণে কারো কাছে ত্রাণ চাওয়াও সম্ভব নয়। এভাবে তো চলতে পারে না। তাছাড়া কারখানা বন্ধ, কার কাছে বেতন চাইব? আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেন না। সবচেয়ে বড় কথা হলোÑ চাকরি আছে কি-না সেটাই তো জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সরকার সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এখনই কর্মস্থলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো দুই-একদিনের মধ্যে বিকল্প কোনো উপায়ে অফিসে যেতে হবে। দীর্ঘদিন পর কর্মস্থলে ফিরতে পারব- এটা ভেবেই স্বস্তি লাগছে।’
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জুয়েল রানা। কর্মরত আছেন একটি ডেভলপার কোম্পানিতে। তার অবস্থাও প্রায় একই। তিনিও সর্বশেষ মার্চ মাসের বেতন পেয়েছেন। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে সামান্য কিছু বোনাস দেওয়া হয়েছে কোম্পানি থেকে। জুয়েল রানা বলেন, ‘আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকি। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। ফলে বাধ্য হয়ে ঢাকাতেই থাকতে হচ্ছে। এতদিন জমানো টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া, বাসা খরচ চালিয়েছি। কিন্তু এখন একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় আর কিছুদিন চললে সত্যিই বিপদে পড়তে হতো।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা কিন্তু থেমে নেই। দেশের প্রশাসন, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার পরিচ্ছন্নকর্মী ও কিছু জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের পাশপাশি মিডিয়া কর্মীরাও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ গরিব। লকডাউন না তুললে এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। এতে করে করোনা মহামারির চেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে বেশি মানুষের মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকারের সাধারণ ছুটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছে বিএনপিসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসজনিত ‘বিপর্যয়’ সৃষ্টি হবে।