ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেশে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক 
🕐 ৪:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০২০

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে যখন মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশেও পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। একদিনে নতুন ৩৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৩। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যুতে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২ দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইশিুসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক অনুষ্ঠানে নতুন করে চারজনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ অধিদফতরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সেই তথ্য সংশোধন করে দেন।

নতুন রোগীর এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশে প্রথমবারের মত কারো দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩০ জন ও নারী ৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন। ৩৩ জনের পরে নতুন করে আর কেউ সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া করোনা বিষয়ে শনাক্ত এবং মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্যের সঙ্গে আইইডিসিআরের দেওয়া তথ্যের মিল না থাকায় ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সে মুহূর্তে যে তথ্য দিয়েছিলেন তখন তা ঠিক ছিল। ওখানে একটি প্রোগ্রাম চলছিল। তথ্যটি মন্ত্রী মহোদয়কে এক দেড় ঘণ্টা আগে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আমি দিয়েছিলাম। মিটিংয়ে বক্তৃতার সময় আইইডিসিআরে ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া হয়। সেসময় একটি নামের বানানের ভুল থাকার কারণেই এই ধরনের ভুলটা হয়েছে। পরে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে জানা যায় এই দু’টি নাম একই ব্যক্তির। এতে বিভ্রান্তি হওয়ার কিছুই নেই।

ডা. আবুল কালাম বলেন, এখন পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৪০১১। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। সর্বমোট শনাক্ত হয়েছেন ১২৩ জন রোগী। তিনি বলেন, ১২৩ জনের মধ্যে এই মুহূর্তে আইইডিসিআরের কাছে তথ্য আছে ১২১ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৪, নারায়ণগঞ্জে ২৩, মাদারীপুরে ১১, চট্টগ্রামে ২, গাইবান্ধায় ৫, জামালপুর ৩, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর, শরীয়তপুর, কক্সবাজার, নরসিংদী, মৌলভীবাজার, সিলেট ও রংপুরে ১ জন করে এবং ঢাকা মহানগরীর বাইরে চার উপজেলায় ৪ জন। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১৫টি জেলায় করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তবে যে জায়গায় একাধিক রোগী আছে সেটাকে ক্লাস্টার বলা হয়। ঢাকা মহানগরী, গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর- এই এলাকাকে ক্লাস্টার বলা হচ্ছে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রায়দিনই আসছে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর। এর মধ্যে ৫ এপ্রিল একবারে ১৮ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর। আর তার পরদিন অর্থাৎ গতকাল সোমবার আবার নতুন করে ৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হলো।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর একদিনে এটিই সর্বোচ্চ আক্রান্তের খবর। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৮০৫। যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে স্পেনে; ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১৮ জন। এছাড়া ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৪৮ জন।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৭০ হাজার ৩২৮। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ইতালিতে; ১৫ হাজার ৮৮৭। এরপর ১৩ হাজার ৫৫ জনের মৃত্যু নিয়ে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৮২ জন রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

 
Electronic Paper