ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সংক্রান্তি ও বৈশাখী মেলা বাতিলে কারুশিল্পে ধস

জাফর আহমদ
🕐 ৪:০৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০২০

জীবন রক্ষার তাগিদে ভেসে যাচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখী উৎসব। প্রতিবছর চৈত্র ও বৈশাখ কেন্দ্রিক নিজস্ব সাংস্কৃতির জোয়ার তৈরি হয়। এবার করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আর এর ফলে দেশিয় পণ্য ও উৎসব কেন্দ্রিক উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ থাকছে। বিষয়টি জীবন রক্ষায় অন্য সব কিছু থেকে দূরে থেকে কোয়ারেন্টাইন পালন বলে অভিহিত করেছেন মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, করোন ভাইরাস কোভিড-১৯ বিশ^জুড়ে এক বিপদের নাম। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এর প্রভাব বাদ যায়নি। শুরু থেকে এতদিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস এক দুইজন করে আক্রান্ত করলেও এখন তা বেড়েছে। আগামী দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। এর ফলে বৈশাখ পালনের চেয়ে নিজ নিজ জীবন রক্ষাই বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবহমান কাল ধরে বাঙালি ঐতিহ্যের বরমালা সাজিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় পহেলা বৈশাখে। এ জন্য রাজধানী ঢাকা ও সারা দেশে রীতিমতো নতুন সাজে সেজে ওঠে। চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন হয়। মৃৎ ও কারুশিল্পের দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখকে সামনে রেখে মৃৎ, কারুশিল্প, বাঁশ-বেতের বিভিন্ন তৈজসপত্রের শিল্পীদের কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যায়।

বৈশাখ কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চৈত্র সংক্রান্তির আসর, বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠানের মহড়া চলে। আর সুপারমার্কেটের দোকানে দোকানে বৈশাখী সাজসজ্জার জিনিস বিক্রির ধুম পড়ে যায়। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় বাঙালির প্রাণে এক নতুন দোলার সৃষ্টি করেছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখ কেন্দ্রিক যে ব্যবসা হয় তার অর্থিক মূল্য ১৪ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ উৎসবে যে সব পণ্য ব্যবহার হয় তা সবই বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। ফলে এর কাঁচামাল, উৎপাদন ব্যয়- এমনকি যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয় তাও আমাদের ঐতিহ্যের ধারায় বছরের পর বছর লালন করে আসা। গ্রাম শহর নির্বিশেষে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এ উৎসব পালন করে। ফলে এ উৎসব অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে যতটা গুরুত্বপূর্ণ।

করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রথম কাজটি হলো এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের দূরত্ব বজায় রাখা। ছোঁয়াচে এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছোবল হেনেছে। করোনা ঠেকাতে সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করানোর জন্য করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখী উৎসব বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই খাত আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ধস নেমেছে। করোনা ভাইরাসের তান্ডব অব্যাহত থাকলে আগামীতে এ ধস আরও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, উৎপাদন ও ভোগকে অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

দেশের বৈশাখী উৎসব, দুই ঈদ ও বিভিন্ন পূজা পার্বন অভ্যান্তরীণ ভোগ, বিপণন ও উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে। বৈশাখী উসৎব তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। এ উৎসবে নিজস্ব পণ্য ও কৃষ্টি নির্ভর হওয়ার কারণে মোট টার্নওভার ঈদের চেয়ে কম হয় কিন্তু পুরোটাই নিজস্ব। নিজস্ব এই উৎসবকে আরও বেশি মুখর করা জন্য সরকার দুই ঈদের পাশাপাশি বৈশাখী বোনাসও শুরু করেছে।

বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বৈশাখী বোনাস দিয়ে দিনটিকে রঙিন করে তুলেছে। এর ফলে বৈশাখী উৎসব বাঙালির অন্যতম প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ফলে এবার এ উৎসবই বন্ধ থাকছে।

 
Electronic Paper