করোনায় বিপাকে মধ্যবিত্তরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০১, ২০২০
পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে মরণঘাতক করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও পরে আবার তা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে এই অঘোষিত লকডাউনে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শপিংমলসহ সকল ধরণের যানবাহন। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট ও পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে।
চলমান অবস্থায় দেশের সবশ্রেণির মানুষের সমস্যা হলেও বিপাকে পরেছে মধ্যবিত্তরা। চরম অসুবিধায় থাকলেও এরা কাউকে কিছু বলতে পারছে না। নিম্নবিত্তদের সরকার সহায়তা করছে, অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানও তাদের পাশে আছে, কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে মধ্যবিত্তরা কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে ইলেকট্রিক দোকানের ব্যবসা আছে আহম্মদুল হকের। ভালোই চলে তার দোকান। দুজন কর্মচারীও আছেন। তিন ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। ব্যবসা থেকে যে আয় হয় তাতেই সংসারটা ভালোভাবে চলে যায়। কিন্তু তার কোনো সঞ্চয় নেই। গত তিন বছর ব্যবসা করলেও এমন সংকটে কখনোই পড়েননি তিনি।
এক সপ্তাহ ধরে দোকান বন্ধ। হাতে কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে ১০ দিনের বাজার করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখেমুখে। কীভাবে দোকান ভাড়া দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি চাকরি করেন একটি বিদেশি পোশাক কারখানায়। বেতন বেশ ভালোই। এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে কারখানা বন্ধ। এর আগ থেকেই বিদেশি অর্ডার না হওয়ায় দুই মাস ধরে বেতন হচ্ছে না। এই অবস্থায় চিন্তায় তার মাথায় হাত। কী করবেন, কী করা উচিত, ভেবে উঠতে পারছেন না। আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এটা কোনো জীবন হলো। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যায় না।
করোনায় দুজন মারা যাওয়ার ঘটনায় মিরপুরের উত্তর টোলারবাগ এলাকা লকডাউন হয়ে আছে এক সপ্তাহ ধরে। ফলে ঘরবন্দি কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে প্রতিদিনই কেউ না কেউ খাবার বিতরণ করেন। কিন্তু মধ্যবিত্তরা আছেন বড় বিপদে। ওই এলাকায় বসবাস করেন এমন একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী বলেন, নিম্নবিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে? তার ঘরে খাবার শেষ হয়ে আসছে। এখন অল্প অল্প করে খাচ্ছেন।
হালিমা আক্তার এ্যানী নবীন আইনজীবী। ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। করোনা ভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তার উপার্জন আপাতত বন্ধ। মাস শেষে তার নির্ধারিত বেতন নেই। তার ভরসা প্রতিদিনের কাজের ওপর, মামলার ওপর। মধ্যবিত্তদের দুর্দশার কথা কেউ কেউ ফেসবুকেও তুলে ধরছেন।
একজন লিখেছেন, সবাই গরিব নিয়ে ব্যস্ত, আপনার পাশের মিডল ক্লাস ফ্যামিলিটারও খবর নিয়েন, বাসায় বাজার সদাই আছে নাকি মুখ চেপে না খেয়ে দিন পার করছে?