ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী
সাহায্য দেওয়ায় অনিয়ম সহ্য করা হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৪:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দু:সময়ে কেউ সুযোগ নিলে, কোনো অভিযোগ পেলে তাকে ছাড়া হবে না, বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম সহ্য করা হবে না। মঙ্গলবার দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী ছুটি বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন, একইসঙ্গে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান না করারও আহ্বান জানান। মশা নিয়ন্ত্রণে মেয়রদের সক্রিয় হওয়ার কথাও বলেন। সকাল ১০টায় এ ভিডিও কনফারেন্স শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে কনফারেন্সে যোগ দেন। ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসকরা তাদের নিজ নিজ জেলার প্রস্তুতির অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তাদের কথার সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে তিনি একাধিক মন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার, সিটি মেয়রসহ সরকার পরিচালনায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, পরিস্থিতি কী এবং সামনের দিনে কী করতে হবে সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিত্তবানদের প্রতি সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তা হবে দুঃখজনক। এটা আমরা সহ্য করব না।
তিনি বলেন, ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। কৃষক, চা শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তারা দৈনন্দিন কাজে যেতে পারছে না। তাদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। সেখানে ১০ টাকা কেজি চালসহ নানা সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের কাছে সাহায্য ও খাদ্যদ্রব্য পাঠাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড অনুযায়ী তালিকা করতে হবে। সেই অনুযায়ী সবাই যেন সাহায্য পায়। কেউ যেন বাদ না পড়ে।
করোনা মোকাবেলায় দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশটা ছোট কিন্তু জনসংখ্যা বিশাল। এরপরও আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। সেজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে রয়েছে।
সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন। কারণ, নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরাসরি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য সহযোগী স্টাফদের জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) প্রয়োজন, সবার জন্য এটির প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, আমরা ছুটি দিয়েছিলাম, হয়তো আমাদের আরও কয়েকদিন একটু বাড়াতে হতে পারে। কারণ যারা অনেকে গ্রামে চলে গেছেন, সেখানে কোনো রকম আবার এই রোগের প্রার্দুভাব দেখা না দেয়, সেই সময়টা হিসেব করে। আমরা ১০/ ১২ দিনের ছুটি দিয়েছিলাম। এটা ১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের এই ছুটিটা সীমিত আকারে বাড়াতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও সুস্থ হয়ে ওঠার কথা তুলে ধরেন জার্মানি ফেরত ফয়সাল শেখ। তিনি সে দেশ থেকে ফেরার ১০দিন পর তার মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা যায়। ঢাকায় শনাক্ত হওয়া প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী তিনি। লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর তিনি নিজ উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) যান। সেখানে প্রাথমিক টেস্টে তার শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। তিনি এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠান আমরাই শুরু করেছিলাম। কিন্তু তাও আমাদের বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মানুষের কল্যাণেই এ অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ আপনাদের কাছে।
রাজধানীতে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মশার গান আমি শুনতে চাই না। মশা মারতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও দুই সিটি করপোরেশন মেয়রসহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাল রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন দেখলাম মশারা সংগীত চর্চা করছে। মশার গান শুনলাম। মশা গুনগুন করে কানের কাছে গান গাচ্ছিল। অর্থাৎ মশার প্রাদুর্ভাব কিন্তু আস্তে আস্তে শুরু হবে।
তারপর আসবে ডেঙ্গু। তো এই ব্যাপারে কিন্তু এখন থেকে আমাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এখন থেকে আমাদের প্রত্যেক নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে বলব, মশার হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে এখন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।