ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গুণীদের ছোঁয়ায় খুদেরা

মোশাররফ হোসেন, নীলফামারী
🕐 ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০

গুণী শিল্পীদের ছোঁয়ায় ছবি আঁকে উৎফুল্ল খুদেরা। তাদের ভাবনার কোঠায় মানুষ আর প্রকৃতি, সৌন্দর্য আর মানবিকতা। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে পথে-ঘাটে বসে কাঁচা হাতের রঙের ছোঁয়ায় ছবি এঁকে এমন মনের ভাব প্রকাশ করেছে তারা। উৎসবের অপর আমেজ জারি, সারি, পালা গানের আসর। নীলফামারীর নীলসাগরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসবে গতকাল শুক্রবার ছিল তৃতীয় দিন। এদিন শিশুশিল্পীরা ঘুরে দেখে প্রকৃতি। কেউ আঁকে ফুল আর ফুলের বাগান। কেউবা গ্রামীণ দৃশ্য।

শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে খুদে, তরুণ আর গুণী শিল্পীদের এ আয়োজন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ উৎসবটি শুরু হয়। আজ শনিবার সমাপনী অনুষ্ঠানের অংশে নীলসাগর চত্বরে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে শিশু এবং গুণী শিল্পীদের আঁকা ছবি। সন্ধ্যা ৬টায় বিদায়ের সুর বেজে উঠবে ওই মিলনমেলার।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদিতি রায় বলে, এমন একটি বড় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত আমি। এখানে এসে প্রকৃতি, মানুষ, পশু-পাখিকে ভালো বাসতে শিখেছি। বুঝতে পেরেছি। ছবি আঁকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে ভালোবাসা থেকে। একই অনুভূতি প্রকাশ করে শিশু শিল্পী তমালিকা রায়, শাহরিয়ার রাফাত, রুনা আক্তারসহ অনেকে। উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দিত বিদেশি শিল্পীরাও। ভারত থেকে এসেছেন শিল্পী পামেলা দাসগুপ্ত। তিনি বলেন, এখানে এসে গাছপালাসহ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে ছবি আঁকছি। সঙ্গে শিশুদের অংশগ্রহ উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তুলেছে। নিজে ছবি আঁকছি, তাদের ছবি আঁকা দেখছি-এটি ব্যতিক্রম। অন্য কোথাও এমনটি ঘটেনি। একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করেন নেপালের কমল কুমার হামাল, মায়ানমারের মনথ্যাটসহ অনেকে।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে ওই মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেন উৎসব আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস এবং কিউরেটর সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ টুটুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গুণী শিল্পী, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সাংস্কৃতিমনা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে উৎসবটি। সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে স্থানীয় সংগঠন ভিশন-২০২১ এবং ঢাকার আর্ট বাংলা।

আয়োজক কমিটির কিউরেটর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ টুটুল জানান, শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে রুচিশীল ও সংস্কৃতিমনস্ক প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং কয়েক প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন সৃষ্টির উদ্দেশ্য এ উৎসবের আয়োজন। বাংলাদেশের বরেণ্য ও তরুণ শিল্পী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, রুমানিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানি ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ১২ জন স্বনামধন্য শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের সান্নিধ্যে নীলফামারী জেলার ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী টানা চার দিন শিল্পকর্ম নির্মাণের সুযোগ পাবে। ওই উৎসবে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্প, কনটেম্পোররি আর্ট প্রজেক্ট, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্প মেলা ও লোক সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় উপস্থাপন। এর আগে জয়পুরহাট এবং গাজীপুরে ওই উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে।

হারুন অর রশিদ জানান, কারুশিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে ২০ স্টলে। উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন ১৬০ জন শিল্পী। এর মধ্যে ১০০ জন তরুণ। উৎসবে আঁকা চিত্রকর্মগুলো নিয়ে নীলসাগরে প্রদর্শনী অনুষ্ঠি হবে আজ। আগামী ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে।

উৎসবের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, শিল্পচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিবাচক কাজের দিকে ধাবিত হবে এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। উৎসবের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের শিল্পী বানানো নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন শিল্পমনার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ও উসব আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ওয়াদুদ রহমান জানান, উৎসবটি বাস্তবায়নে সংগঠনের ১৫০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।

 
Electronic Paper