দেড় মাসে সৌদি ফেরত সাড়ে ৫ হাজার
সবকিছু খুঁইয়ে সর্বস্বান্ত শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
সৌদি আরবের শ্রমনীতি, আকামা জটিলতা এবং ওয়ার্ক পারমিটসহ নানা কারণে গণহারে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এ শ্রমিকদের বেশিরভাগই তিন মাস থেকে এক বছর আগে সেখানে পাড়ি জমান। কিন্তু সবকিছু খুঁইয়ে এক দুঃস্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরছেন তারা। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য মতে, গত দেড় মাসে সৌদি আরব থেকে খালি হাতে ফিরেছেন সাড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশি।
সর্বশেষ গত শনিবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্স এসভি-৮০২ বিমানযোগে দেশে ফিরেছেন ১৪৫ জন। এর আগে গত বৃহস্পতিবারও একইভাবে ফিরেছেন ১০২ জন। সৌদি ফেরত এসব শ্রমিকরা জানিয়েছে, কোনো কারণ ছাড়াই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি এসব শ্রমিক।
বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক জানায়, গত দুদিনে দেশটি থেকে ফেরত আসাদের সংখ্যাসহ গত দেড় মাসে ফিরলেন সাড়ে পাঁচ হাজার। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় তাদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি আরব ফেরত শহিদুল ইসলাম জানান, মাত্র তিন মাস আগে তিন লাখ টাকা খরচ করে ড্রাইভিং কাজে দেশটিতে পাড়ি জমান। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মাত্র আট মাস কিংবা নয় মাসের মাথায়ই দেশে ফিরতে হয়েছে অনেককে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, সৌদি ফেরতদের অনেকেই যাওয়ার তিন মাস থেকে এক বছরের মধ্যে দেশে ফিরেছেন। নিয়োগকর্তা তাদের আকামা করে দেয়নি। এ ছাড়া পুলিশ ধরলে তারা নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। তাদের দায়িত্ব নেয়নি কেউই।
গত বছরের নভেম্বরে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী জানান, সব দেশের শ্রমিকদের জন্য সৌদি সরকার এটি অভিন্ন নীতি নিয়েছে। সৌদি সরকার গাড়ি চালনা এবং নানা পেশায় নারীদের সুযোগ দিয়েছে। ফলে এসব জায়গায় কর্মরত শ্রমিকরা সমস্যায় পড়ছেন।
তিনি আরও জানান, সৌদি আরবের যে তেলকেন্দ্রিক অর্থনীতি, আগামী দশ-বিশ বছরের মাথায় সেই তেল থেকে আয় ক্রমেই কমে আসবে। ফলে গোটা অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাচ্ছে দেশটি। তাদের শ্রম ব্যবস্থার ভেতরে তাদের নিজের লোকবলকে প্রথমবারের মতো জোরের সঙ্গে নিয়ে আসছে। এ ছাড়া ওয়ার্ক পারমিটের কারণে একটি কাজের বাইরে অন্য কাজে যাওয়ারও সুযোগ নেই শ্রমিকদের। ফেরত আসা শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের আকামা বৈধতা থাকার পরও পুলিশ তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে।
সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম, মক্কা ও মদিনাসহ আরও কয়েকটি স্থানে ১৫ থেকে ১৬ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এর মধ্যে বেশির ভাগই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। অনেকে না খেয়েও দিন পার করছেন। নিয়োগদাতা কোম্পানির লোকজন বেশির ভাগ শ্রমিকের সঙ্গেই প্রতারণা করে আসছে। সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে বাংলাদেশি দালালদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠায় এসব হয়রানি বেশি হচ্ছে।