ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বসন্ত বরণ, ভালোবাসার অনুভবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:২৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০

ফাল্গুন আমাদের বাঙালি ঐতিহ্যের অংশ। আর প্রেম হলো মানুষের সহজাত প্রবণতা, একে প্রবৃত্তিও বলা যায়। ফলে দিনটিকে আনন্দময় করে তুলতে ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করবো।’ এমনটাই জানিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো, আল আমিন।

আসলেই তো। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস-দুটিতে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু ‘ভালোবাসা’। একটু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায়, প্রকৃতি ও বিশেষ মানুষের প্রতি ভালোবাসা আলাদা ‘কিছু’ নয়।

ভালোবাসার ধরন ভিন্ন হতে পারে। তবে দুটো-ই মানুষের অনুভূতি ও মর্মে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। প্রকৃতি ও মানব মনের প্রতি প্রেম একই জায়গা থেকে আসে।

ভালোবাসা হলো এক ধরনের প্রতিজ্ঞা। আর বসন্ত হলো প্রকৃতির বন্দনা। বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলে আজকের দিনটি হোক অনন্য। বসন্তের নির্মলতায় ভালোবাসা হোক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। একটি বাঙালি সংস্কৃতি, অন্যটি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে; একটি প্রকৃতিকে বরণ করার আর অন্যটি আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দিন- এবার দুই-ই মিলেমিশে একাকার। আর এ কারণে আনন্দও যেন আজ দ্বিগুণ!

আজকের দিনটি সবার কাছেই অন্যরকম। প্রকৃতির রঙে ভালোবাসাকে রাঙিয়ে তোলার দিন। কে, কোন উৎসবকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই অংক একেবারেই বাদ।

উৎসব যাই হোক, ‘পালন’ই বড় কথা। আর উৎসব পালন করার ব্যাপারটি একান্তই ব্যক্তিগত।

কবে থেকে এই বাংলায় শুরু..
প্রাচীন আমল থেকেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হতো। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায় যেমন, তেমনই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালন করার রীতি চলে আসছে। তবে ১৪০১ বঙ্গাব্দে এদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ পালিত হয়।

দিনটি যাকে নিয়ে...
ভালোবাসা দিবস অতীতে মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অংশ ছিল। তবে ‘ভালোবাসা’ কোন দেশ বা জাতি নয়। তাই ধীরে ধীরে এই দিবসও আমাদের সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। ২৪৬ সালে ইতালীর রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পাদ্রী চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তাকে বন্দী করা হয়। বন্দী অবস্থায় থেকে তিনি কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পরবর্তীতে দেশে দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়।

বদলে গেল বর্ষপঞ্জি
বদলে গেছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। নতুন সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে, আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। শুধু এই দিন নয়, ১৯৭১ সালের কয়েকটি ঐতিহাসিক দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যার ফলে ইংরেজি দিন ঠিক থাকলেও কিছুটা এদিক সেদিক হয়েছে বাংলা মাসের তারিখ। নতুন এই বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখ এখন থেকে একই থাকবে প্রতিবছর।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ২০২০ সালের সরকারি ছুটির তালিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটির তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ কয়েকটি জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখে পরিবর্তন এসেছে।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল ভারতে ১৯৫২ সালে। স্বনামধন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে প্রধান করে ভারতের সরকার একটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি করেছিল। তার আগে কেবল চান্দ্র হিসাব ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি করা হতো। মেঘনাদ সাহার ওই কমিটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের সুপারিশ করেন এবং তা গৃহীত হয়। পরে ১৯৫৬ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কিছু সুপারিশ সরকারের কাছে করেন। নতুন বর্ষপঞ্জি তারই আলোকে করা হয়েছে।

উৎসব…
নতুন প্রাণের কল্লোলে প্রকৃতির বুকে সেজেছে ঋতুরাজ বসন্ত। সবুজ পাতার বুকে ফুলের হাসি যেন নবজীবনের উচ্ছ্বাস।ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির এমন বর্ণিল সাজের ছোঁয়া লাগে বসন্ত উৎসবের মঞ্চেও। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে অথবা কবির কবিতায় কখনও বন্দনা বসন্তের দখিনা বাতাসের, কখনও আরাধনা হয় সুবাসমাখা ফুলের। এবছর যোগ হয়েছে ভালোবাসার রং। সেই আবেশে মেতেছেন শিল্পী সমাজও। বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বনের সূচনাও হয় এমনই এক ঋতুতে। যখন মানুষের মন ঠিক যেন কবিগুরুর ভাষায় ‘অলক্ষ্য রঙে’র ছোঁয়ায় অকারণের সুখে’ ভরে ওঠে। বাসন্তী ভালোবাসার নির্যাস তাই ছড়িয়ে পড়ে সাজ-পোশাকের বাহারের মতোই মানুষের দেহ-মনে। রঙিন ভালোবাসায় সাজানো বসন্ত বরণের পার্বন শেষ হলেও পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকুক তার রেশ। ভালোবাসাটুকুও…

 

 
Electronic Paper