করোনা শনাক্তে থার্মাল স্ক্যানার যথেষ্ট নয়
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের অভিমত
মৃন্ময় মাসুদ
🕐 ১০:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে হ্যান্ডস্ক্যানার। এসব স্ক্যানার দিয়ে চীন থেকে আগতদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্ক্যানার করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে যথেষ্ট নয়। করোনা রোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও সতর্কতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো যাত্রীর দেহের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির বেশি হলেই কেবল থার্মাল স্ক্যানার সংকেত দেবে। আর বিভিন্ন কারণেই মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কাজেই শুধু দেহের তাপমাত্রা দিয়ে কেউ করোনায় আক্রান্ত কি-না তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া করোনা ভাইরাস প্রথম অবস্থায় মানুষের দেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। পরবর্তী ১৪ দিনে যে কোনো সময়ের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এম এস আলমগীর খোলা কাগজকে বলেন, থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্তকরণ স্বীকৃত কোনো বৈজ্ঞানিক বিষয় নয়। আমরা যারা সায়েন্স নিয়ে কাজ করি, আমাদের কাছে বিষয়টি খুব একটা কার্যকর মনে হয় না। তবু আমরা (দেশের বিভিন্ন প্রবেশ পথে) থার্মাল স্ক্যানার দিচ্ছি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ দিচ্ছে, আমরাও দিচ্ছি। তবে এটা কতটুকু কার্যকর তা আমার বোধগম্য নয়। ধরুন, কারো শরীরে সুপ্ত অবস্থায় করোনা ভাইরাস রয়েছে কিন্তু সেই মুহূর্তে তার জ্বর নেই, তিনি যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সেটা ধরার কোনো উপায় নেই। আসলে এটা (থার্মাল স্ক্যানার) কোনো বৈজ্ঞানিক উপায় নয়।
অবশ্য আক্রান্ত স্থান থেকে আগতদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ (১৪ দিন) পর্যবেক্ষণে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. মোজাহেরুল হক খোলা কাগজকে বলেন, থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে হয়তো করোনা ভাইরাস শতভাগ শনাক্ত করা যাবে না, তবে বেশিরভাই ক্ষেত্রেই শনাক্ত করা সম্ভব।
যারা এই স্ক্যানিং কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের ওয়েল প্রোটেক্টেড থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু যারা ওই সব আক্রান্ত এলাকা থেকে দেশে আসছেন তাদের প্রোটেকশন দিলেই হবে না, যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদেরও ওয়েল প্রোটেক্টেড থাকতে হবে। তবেই আমরা এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
চীনে ইতোমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এ পর্যন্ত ১৯টি দেশে করোনায় আক্রান্ত ৭৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, পদ্মা সেতুসহ আমাদের দেশে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের অংশীদার চীন। যে কারণে চীনের বেশ কিছু কর্মী বাংলাদেশে কর্মরত। যাদের বেশিরভাগই চীনা নববর্ষ উপলক্ষে দেশে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেকে ফিরেও এসেছেন। এছাড়া দেশটির সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। সে জন্যও প্রতিদিন চীনে যাতায়াত করেন কয়েক হাজার মানুষ। কাজেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও।
তবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। থার্মাল স্ক্যানার বসানোর পাশাপাশি শাহজালাল বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া চীন ও আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগতদের একটি করে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে ১৪ দিনের মধ্যে তাদের আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।