নির্জন ফুটপাতে নিশ্চিত নিরাপত্তা
এম কবীর
🕐 ১০:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে শিগগিরই বিমান বন্দর সড়কে বিশেষ করে বনানী ফ্লাইওভারের পর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরায় আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক আরও বেশি নিরাপত্তাও নজরদারির মধ্যে আসছে এমনটি জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির নিরাপত্তা অনেক জোরদার করা হয়েছে। এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী অনেকেই বলছেন, ঢাবির ছাত্রীর ঘটনার পর থেকেই এখানে আগের তুলনায় প্রশাসনিক মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে, বেড়েছে পুলিশি টহল, চলছে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের বিশেষ টিমও নজর রাখছে সড়কটিতে। এলাকার আশপাশ ঝোঁপঝাড়ও পরিষ্কার করে সৌন্দর্যবর্ধনে ফুলের বাগান করতে দেখা গেছে।
এরই মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের পক্ষ থেকে বিমান বন্দর সড়কের প্রায় ৭০টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে বিশেষ নজরদারিও বড়ানো হয়েছে। তাছাড়া রাস্তার পাশে যে সব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। রাতের বেলায় পথচারীদের চলাফেরায় যাতে কোনো বাধায় পড়তে না হয় তার জন্য সড়কে বেশি করে আলো প্রজ্বলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পথচারীরা বলেছেন, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন কুর্মিটোলা তথা বিমানবন্দর রাস্তাটি অনেক নিরাপদ ও ভবঘুরেমুক্ত।
পথচারীরা জানিয়েছেন, কুর্মিটোলা রাস্তাটি কয়েক দিন আগেও মাদকাসক্ত ও ভবঘুরেদের ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। সন্ধ্যা হলে তাদের আবাসস্থল ছিল ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাতগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির কারণে তাদের আনাগোনাও কমে গেছে। অনেকটা নিরাপদেই সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার পরেও এই পথ দিয়ে চলাফেরা করতে পারে।
র্যাব জানিয়েছে, অনাকাক্সিক্ষত সেই ঘটনার পর থেকে র্যাবের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশাপাশি সেখানে যে ভবঘুরেদের দেখা যেত তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সেখান থেকে প্রায় ৭০টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তাছাড়া সেই রাস্তায় অতিরিক্ত লাইটের মাধ্যমে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে র্যাব।
অন্যদিকে, গুলশান জোনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে কড়া নজরদারি। সেদিনের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। নজরদারির পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসায়ী ও ভবঘুরেদের আইনের আওতায় আনা ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনের আশপাশের ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে।
গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, আর যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য যা যা প্রয়োজন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সবই করা হচ্ছে। সড়কে বাড়তি নিরাপত্তায় ভ্রাম্যমাণ টহল পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। পথচারীদের হাটার সুবিধার্থে ফুটওভার ব্রিজগুলো ভবঘুরে মুক্ত করা হয়েছে।
এই এলাকায় রাস্তার পাশে ও রেলস্টেশনের আশপাশের যে সব ঝুপড়ি ঘর ছিল সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার সেই এলাকা থেকে বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, শিগগিরই আরো কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। পুরো বিমান বন্দর রাস্তাটি নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে রাখার জন্য সিটি করপোরেশন ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি ঢাবির এক ছাত্রীকে কুর্মিটোলার শেওড়ায় এক মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে পাশের ঝোঁপে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মজনু নামে এক ভবঘুরেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মজনু এই ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামির ডিএনএ টেস্টেও ধর্ষণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।