ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লাগামহীন মোটরসাইকেল নিবন্ধন

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২০

মোটরসাইকেল নিবন্ধন কার্যক্রমে পুরোপুরি লাগাম ছাড়া অবস্থানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সরকার যেখানে যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, বিআরটিএ সেখানে দিনে ২৭২টি (গত আট মাসে) নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন দিয়েছে। এতে ঢাকায় যানজট ও সড়কে বিশৃঙ্খলা যেমন বেড়েছে; তেমনই বেড়েছে দুর্ঘটনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিসংখ্যক মোটরসাইকেল নিবন্ধন দেওয়ার কারণে দুর্ঘটনার পাশাপাশি সড়কে বিশৃঙ্খলা কমছে না। ঢাকার মতো জনবহুল, যানজট ও দুর্ঘটনাপ্রবণ শহরে মোটরসাইকেলের মতো দুই চাকার বাহন কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়। এজন্য বিআরটিএকে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটি বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণও লাগাম ছাড়া নিবন্ধন প্রদান। তাদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- ২০১৯ সালে সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৯৮টি। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৬৪৮ জন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। সবচেয়ে বেশি ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। ২০১৬ সালে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল সাত লাখ। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২২ লাখ। মোটরসাইকেল চালকদের একটা বড় অংশ কিশোর। তাদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি।

বিআরটিএর পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৪টির বেশি। সেখানে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা মাত্র ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০৩ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই চলাচল করছে প্রায় ৬ লাখ মোটরসাইকেল। গড় হিসাবে এ সময়ে ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ২৭৩টি করে নতুন মোটরসাইকেল নেমেছে। নিসচার দাবি, লাইসেন্স ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে অবৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে এসব অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক।

নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ঢাকাসহ অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরে মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরিধানের সুঅভ্যাস গড়ে উঠেছে। কিন্তু জেলা ও গ্রামগঞ্জে হেলমেট না পরার প্রবণতাই লক্ষ করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের মোটরসাইকেল চালনায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও প্রশাসনের সামনে দিয়ে লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল ও অপ্রাপ্ত কিশোররা মোটরসাইকেল চালাচ্ছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সড়ক দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, মোটরসাইকেল বাহনটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। চার চাকার সঙ্গে তুলনা করলে এটি ৩০ গুণ ঝুঁকিপূর্ণ।

বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতার কারণে বর্তমানে কেউ আর হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন না।

বিআরটিএর এ কর্মকর্তা মোটরসাইকেল আরোহীরা ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন বা মানতে বাধ্য হচ্ছেন- উল্লেখ করলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। বেশিরভাগ পয়েন্টেই আরোহীরা ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে ফাঁক-ফোকর দিয়ে চলছেন। এখনো ফুটপাত দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। চালকসহ আরোহীদেরও হেলমেট পরতে দেখা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় মোটরসাইকেলে বিভিন্ন কোম্পানি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা শুরু করার পরই মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে ঢাকায় উবার, পাঠাও, ও ভাই, স্যাম, চলো, ইজিয়ার, আমার বাইক, সহজ রাইডার্স, বাহন, আমার রাইড, ঢাকা রাইডার্স ঢাকা মটোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারের সুবিধা দিচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়কে আমরা সব অবৈধ যান ও চালকদের বিষয়ে সচেতন। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।

 
Electronic Paper