দুঃস্বপ্ন নিয়ে ফিরছেন প্রবাসী শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
রাত ১১টা ২০ মিনিট। গত বৃহস্পতিবার সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানের ১০৯ যাত্রী সৌদি আরব থেকে ফিরলেন। তবে কারও মুখে স্বস্তির ছাপ নেই। সবকিছু খুঁইয়ে দিশেহারা এসব প্রবাসী শ্রমিক। গত বৃহস্পতিবারের এ সংখ্যা নিয়ে নতুন বছরের প্রথম ১৬ দিনে সৌদি আরব থেকে একইভাবে ফিরলেন এক হাজার ৬১০ বাংলাদেশি। যারা ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সৌদিতে পাড়ি জমান। তবে দেশটির তথাকথিত ফ্রি ভিসা, নতুন শ্রমনীতি ও অর্থনীতি এবং নির্যাতনের কারণে সবকিছু হারিয়ে খালি হাতে ফিরছেন এসব শ্রমিক।
বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক জানায়, বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ১০৯ জন দেশে ফিরেছেন। এদের কেউ কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। রাতেই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সৌদি ফেরত এসব শ্রমিকদের অভিযোগ, পাসপোর্টে ভিসার মেয়াদ থাকার পরও তাদের আটক করা হয়। আবার আকামা তৈরির জন্য নিয়োগকর্তাকে টাকা দিলেও আকামা তৈরি করে দেয়নি। পুলিশ আটক করলে নিয়োগকর্তার সঙ্গে কথা বললেও কোনো সমাধান মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়েই খালি হাতে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাদের। আবার ফ্রি ভিসায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের আকামা ফি বাড়ানো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভিসায় উল্লেখ থাকা নির্দিষ্ট কোম্পানির বাইরে কাজ করলে সেটি সৌদি আইনে অবৈধ।
সৌদি আরবের নতুন নিয়ম অনুযায়ী ওয়ার্ক পারমিটে যে পেশার কথা বলা হয় এর বাইরে শ্রমিকরা কোনো কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে যারা সৌদিতে যান তারা ৬০০, ৭০০ বা ৮০০ রিয়েল বেতন পান। এই কম টাকার কারণে অতিরিক্ত কাজ খোঁজেন তারা। কিন্তু এতে শ্রমিকরা ধরা পড়লে পুলিশ চাইলেই তাকে পাঠিয়ে দিতে পারে।
এছাড়া, সৌদির যে তেলকেন্দ্রিক অর্থনীতি, তাতে আগামী দশ বিশ বছরের মাথায় সেই তেল থেকে ইনকাম ক্রমেই কমে আসবে বলে জানান, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী। তাই তারা পুরো অর্থনীতিকে আবার ঢেলে সাজাচ্ছে। তাদের শ্রম ব্যবস্থার ভেতরে তাদের নিজদের লোককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবারের ওই ফ্লাইটে সৌদি থেকে ফেরেন সিলেটের আবু তালেব। পাঁচ বছর আগে শ্রমিক হিসেবে সৌদি যান। কিন্তু গত দুই মাস আগে সেখানে মানসিক ভারসাম্য হারান। দুই মাস আগে সৌদি গিয়েছিলেন নোয়াখালীর আজিম হোসেন। পাসপোর্টে তিন মাসের ভিসা থাকা সত্তেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় সময় পুলিশের সঙ্গে নিয়োগকর্তার কথা বলার পরও কাজ হয়নি। মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন, কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন ও মানিক, শরিয়তপুরের মিলন, যশোরের মোসলেম উদ্দিন, বগুড়ার মেহেদি হাসান, গাজীপুরের রাজিবসহ ১০৯ বাংলাদেশির বেশিরভাগেরই এমন অবস্থা।
সর্বশেষ ফেরত আসা শ্রমিকদের মাঝে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সালের ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশি সৌদি থেকে ফেরত আসেন। নতুন বছর শুরুর ১৬ দিনে এক হাজার ৬১০ বাংলাদেশি ব্যাক করেছেন যারা প্রায় সবাই খালি হাতে। তারা সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, এই মানুষগুলোর পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।