ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তুরাগ তীরে মুসল্লির ঢল

এম কবীর
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২০

ইজতেমায় দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার জুমার নামাজে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখরিত ছিল ইজতেমা ময়দান। শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টায় জুমার নামাজ শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ২টায়। জুমার নামাজে যোগ দিতে ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষ ছুটে আসেন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। দুপুর ১২টার মধ্যেই তিলধারণের ঠাঁই ছিল না ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত ছাউনির নিচে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা নির্ধারিত খিত্তায় নামাজ আদায় করেছেন।

নামাজের সময় যত ঘনিয়ে আসে, বাড়তে থাকে মুসল্লির ভিড়। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ও আশপাশের বিভিন্ন ভবন ও ময়দানের আশপাশের বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাত ও খালি জায়গায় অবস্থান নেন মুসল্লিরা। এ ছাড়া অনেকেই বাড়ির ছাদ, নৌকা, গাড়ির ছাদে পাটি, পলিথিন, চট ও পত্রিকা বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। নামাজের সময় ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা জানিয়েছেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য ইজতেমায় এসে লাখো মানুষের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। নামাজে বিশে^র সব মানুষের কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে দোয়া করেছেন তারা।

চট্টগ্রাম থেকে ইজতেমায় আসা ষাটোর্ধ্ব আব্দুল্লাহ আল সাদি বলেন, গত বুধবার থেকে ইজতেমায় আছেন, এখানে এসে অন্তত এটা শিখেছি যে ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না। তাই ঈমানকে মজবুত করার জন্য দিনের দাওয়াতে বের হওয়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলেও মনে করেন তিনি।

নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই পুলিশ ও ট্রাফিক সদস্যদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে দেখা যায়। তারপরও ট্রাফিক ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রেখে মুসল্লিদের নিরাপদে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন তারা।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা পরিচালনা কমিটির শীর্ষ মুরব্বি ও ব্যবস্থাপনা সমন্বয়কারী ওয়াসেফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সা’দ কান্ধলভি অনুসারি তাবলিগ মারকাজের ভারতের নিজাম উদ্দিনের পক্ষ থেকে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যোগ দিয়েছেন। তাদের তত্ত্বাবধানে ইজতেমার কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

শীর্ষ মুরুব্বি ড. রফিকুল ইসলাম জানান, কুয়াশা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে গত বুধবার বিকেল থেকেই ময়দানে মুসল্লিরা এসে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। ইজতেমার তিন দিনের কর্মসূচি নিয়ে তিনি আরও বলেন, হকিকত, দরসে কুরআন, দরসে হাদিস, তাশকিল, মাসলা-মাসায়েল আলোচনা, চিল্লায় নাম নিবন্ধন, নতুন জামাত তৈরি, তালিম, গাস্তের নিয়মকানুন শেখানো, ফাজায়েলে আমল, আখলাক ও আদব সম্পর্কে আলোচনা ও যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন রয়েছে।

এর আগে তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার ২য় পর্বে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে সা’দ অনুসারীরা গত বুধবার থেকেই জমায়েত হন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা চেরাগ আলীর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়।

অন্যদিকে, ইজতেমার সব কার্যক্রম সর্বাত্মকভাবে সফল করতে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাছাড়া আগত মুসল্লিদের ফ্রি চিকিৎসার জন্য অনেকগুলো ক্যাম্প স্থাপন করে সেখান থেকে ফি ওষুধও প্রদান করা হচ্ছে।

নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকে থাকছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমা ময়দানজুড়ে সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। তাছাড়া বিদেশি মেহমানদের কামরা বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদা প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

এদিকে, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথম পর্বে যে সব সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছিল তা দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়ও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বার্ধক্যজনিত কারণে কাজী আলাউদ্দিন (৬৬) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের লক্ষ্মীপুর (চাঁনপুর) এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি নিজ খিত্তায় অসুস্থ হলে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইজতেমার প্রথম আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৭ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে স্থানান্তর করা হয়। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গত ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি শেষ হয় প্রথমপর্বের ইজতেমা। আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

 
Electronic Paper