ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জনসংখ্যাকে শক্তিতে রূপান্তরের কর্মপন্থা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০

জনসংখ্যা অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ- এই দর্শনকে সামনে রেখে রূপকল্প-৪১-এর অভীষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর নির্দেশনা লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে সবচেয়ে কর্মক্ষম মানুষের দেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বর্তমান শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত। এরপর তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে; বাড়তে থাকবে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা।

২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। তখনও যাতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা না কমে, এমন বিষয় সংবলিত ‘দ্বিতীয় প্রেক্ষিত রূপকল্প ২০২১-২০৪১’ খসড়া প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা দলিল প্রধানমন্ত্রীকে অবহিতকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সভায় তিনি নিজেই সভাপতিত্ব করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভার কার্যবিবরণী পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। সভায় শেখ হাসিনা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা দেন। যা ২০৪১ সাল নাগাদ টেকসই সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ বিনির্মাণ সহায়ক হবে।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা কর্মক্ষম মানুষ অধিক্যের দেশ এখন বাংলাদেশ। ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে হারে মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করছে তা উন্নত দেশ গড়ার সহায়ক। দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৬ শতাংশ ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের। এটা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। একসময় দেশে জনসংখ্যাকে অভিশাপ মনে করে তা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, এখনো তা কার্যকর আছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের মতে, স্বাধীনতাপূর্ব তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এ অঞ্চলে জনসংখ্যা রোধকল্পে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপশি শুরু হয় জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তরের কাজ। এখনো যা অব্যাহত আছে। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বড় কথা নয়, বড় কথা জনসম্পদে রূপান্তর করা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি করলে জনসংখ্যার অনুপাত নেতিবাচক হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান শতাব্দীর মাঝামাঝি কর্মক্ষম তরুণের সংখ্যা কমে যাবে। আর বেড়ে যাবে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা।

এক্ষেত্রে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হলেও বৃদ্ধ মানুষ বেড়ে যাওয়ার কারণে উন্নয়ন ধরে রাখা। এতে উন্নয়ন টেকসই হবে না। নীতিনির্ধারণী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সে কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার যে হিসাব দেখানো হয়েছে তা আরও বাড়াতে হবে। আমরা এমন একটি দেশে পরিণত হতে চাই না যেখানে কেবল বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশি হবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপুল এ জনসংখ্যাকে উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে কর্মপন্থা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর মাধ্যমে ৩৫০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। যার মাধ্যমে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান সমৃদ্ধ উন্নত দেশ গড়ার অভীষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে কথা উঠে। বর্তমানে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক।

এ তৈরি পোশাক নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বহুমুখী করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে এক সময়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি নির্ভর শ্রীলংকার বিষয়টি উঠে আসে। শ্রীলংকার এক সময় প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল তৈরি পোশাক। কিন্তু সেখানে গৃহযুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পালাবদলসহ নানা কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নামে। এতে ধাক্কা খায় সেখানকার অর্থনীতি। ২০৪১ সালের উন্নত অভীষ্টে পৌঁছতে তৈরি পোশাক রপ্তানির পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখী করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে সেদিকে নজর দিতে হবে। জনমিতিক প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত আলাদাভাবে দেখতে হবে; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য থাকতে হবে। ড. মশিউর রহমান সক্ষম, উৎপাদনক্ষম জনশক্তি তৈরিতে কর্মপন্থা সাজানোর শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনার ব্যাখ্যা করেন।

 
Electronic Paper