ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তীব্র ঠান্ডা, বাড়ছে রোগবালাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:১০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০

বায়ুদূষণে দুই দিন ধরে ঢাকা শীর্ষে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা শৈত্যপ্রবাহে যাঁরা কষ্ট পাচ্ছিলেন, ভরদুপুরেও রোদ না থাকায় যাঁরা বিড়ম্বনায় ছিলেন, তাঁদের জন্য কিছুটা হলেও সুসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা বলছে, দিনভর কুয়াশার দাপট কমে সূর্যের দেখা মিলবে, বাড়বে তাপমাত্রা। এরই মধ্যে দিনের বেলা খটখটে রোদের দেখা পেয়েছে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। এক দিনের ব্যবধানে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল সোমবার ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।

তবে তাপমাত্রা কম থাকায় ও বাতাসে দূষিত সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেশি থাকায় ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ শহরের বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। অন্য ১২টি শহরের বাতাসও গত রোববার দিনভর খুবই অস্বাস্থ্যকর থেকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, রোববার রাত ১০টা থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত রাজধানীর বাতাস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বা হ্যাজারডার্স অবস্থায় ছিল। যা বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক থেকে ১ নম্বর অবস্থায় ছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লি ও তৃতীয় স্থানে ছিল থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই শহর।

তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তারা কাজ করতে পারছেন না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ মঙ্গলবার দেশের বেশির ভাগ স্থানে রাতে একই রকমের শীত থাকতে পারে। তবে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও এতে শীতের কষ্ট খুব বেশি কমবে না। গত তিন দিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশে মেঘ ও দৃষ্টিসীমাজুড়ে যে কুয়াশা ছিল, তা আরও কমে আসতে পারে। এতে দিনের বেলা আরও বেশি সময়জুড়ে সূর্যের তাপ বা রোদের দেখা পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে হঠাৎ রাজধানী ঢাকা পড়েছে ঘন কুয়াশার চাদরে। কুয়াশার দেয়ালে কয়েক হাত দূরের দৃশ্য দেখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। সূর্যের দেখা না মেলায় রাজধানীতে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে পথ দেখাচ্ছে হেডলাইট। পাশাপাশি কুয়াশায় বিমানবন্দরে বন্ধ রয়েছে প্লেন ওঠানামা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের মধ্যে আবারো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। একই দিন সকাল ৬টায় রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দশমিক ৬ ডিগ্রি কমে যায়।

এছাড়া রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, চাঁদপুর ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এসব জায়গায় ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাজশাহী : অবিরাম মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বেড়েছে শীত। কনকনে শীত আর ঠাণ্ডা বাতাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে সবকিছু। সূর্যের দেখা মিলছে না বেলা ১১টা পর্যন্ত। তবে দিনের চেয়ে সন্ধ্যা ও রাতে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সোমবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি। এদিন সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম ফেরদৌস জানান, তীব্র শীতের ফলে অনেক নবজাতক নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, কোল্ড ডায়রিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন।

পঞ্চগড় : দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আবারও কনকনে শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। সোমবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, নেহায়েত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র কুয়াশার কারণে দুপুর পর্যন্ত যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

কুড়িগ্রাম : ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। ঠাণ্ডায় চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। হাসপাতালগুলোয় দিন দিন বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। টানা শীতের প্রকোপে প্রান্তিক ৬ লাখ মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত জেলায় শীতার্ত মানুষের জন্য ৬১ হাজার ১৪টি কম্বল উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা তীব্র শৈত্যপ্রবাহের রূপ নিতে পারে।

চাঁদপুর : তিন-চারদিন তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে নৌ ও সড়কপথে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে যাত্রীসাধারণকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। চলতি সপ্তাহে কুয়াশার ঘনত্ব ছিল শূন্য দৃষ্টিসীমায়। এ কারণে লঞ্চগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়েও নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিলম্বে ঘাটে পৌঁছতে হচ্ছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : সোমবার আবহাওয়া ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে ভোরের দিকে বেশি কুয়াশা থাকে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন। চা-শ্রমিক ও স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার তাদের কাজ করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এদিন শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শীতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সকাল থেকে কুয়াশা বেড়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমবে যাবে। বর্তমানে ঢাকার তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করেছে। তবে শীতে তাপমাত্রা কমে সোমবার দিনগত রাত থেকেই কুয়াশা শুরু হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে যাবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, বুধ ও বৃহস্পতি রাত ও দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। তারপরের ৫ দিনের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

 
Electronic Paper