দৃশ্যমান পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল
তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
প্রমত্ত পদ্মার বুক চিরে একটু একটু করে মাথা উঁচু করছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এছাড়া সরকারের আরেক মেগা প্রজেক্ট রাজধানীর মেট্রোরেলের কাজ দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলেছে। চলতি ডিসেম্বরে বসানো হয়েছে পদ্মা ১৮তম স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে সেতুর প্রায় পৌনে তিন কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সেতুর ১৭তম স্প্যান ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়। ১৬তম স্প্যান বাসানোর মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ১৭তম এবং ১৭তম স্প্যান বাসানোর মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে আজ বসানো হলো ১৮তম স্প্যান।
সেতুর রোডওয়ে স্ল্যাব ও রেলওয়ে স্ল্যাবসহ অন্যান্য কাজও সিডিউল অনুযায়ী চলছে। আগামী ২০২১ সালের জুন মাসেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। সেতুর আর্থিক অগ্রগতি ৭৫.৮৪ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। মূল সেতুর সব কটি পাইল ড্রাইভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩২টির কাজ শেষ হয়েছে। আর বাকি ১০টির কাজ চলমান। সর্বমোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়া সাইটে এসেছে ৩১টিরেলওয়ে স্লাবের জন্য মোট দুই হাজার ৯৫৬টি প্রি-কাস্টের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ৮৯১টি স্লাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৬১টি স্লাব স্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে দুই হাজার ৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেকস্লাবের মধ্যে এক হাজার ৫৫৩টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৫৪টি স্থাপন করা হয়েছে।
দৃশ্যমান হচ্ছে মেট্রোরেল
একের পর এক পিলারের ওপর বসছে মেট্রোরেলের মূল অবকাঠামো। দৃশ্যমান হচ্ছে এর অবয়ব। এগিয়ে চলেছে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের কার্যক্রম। মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত উড়ালপথে রেললাইন বসানো শুরু হচ্ছে। আগামী জুনে ইঞ্জিন-কোচ চলে আসার কথা। সেগুলো ঠিকঠাক মতো বসানোর পর শুরু হবে পরীক্ষামূলক চলাচল। সবকিছু পরিকল্পনামতো এগোলে ২০২১ সালের শেষে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাকাবাসী বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন।
ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রোরেলের কাজের মোট অগ্রগতি নভেম্বর পর্যন্ত ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের আট কিলোমিটার উড়ালপথ তৈরির কাজ শেষ। জাপানের সহায়তায় এই মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন গঠন করা হয় ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)। ২০১৫ সালে জাপানের সহায়তায় এসটিপি সংশোধন (আরএসটিপি) করে মেট্রোরেলের রুট সংখ্যা বাড়ানো হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মেট্রোরেলের কাজে আর্থিক ও কারিগরি কোনো বাধা নেই। তবে স্টেশন থেকে ফুটপাতে মানুষ নামার পর যাতে ভিড় না লেগে যায়, সে জন্য বড় জায়গা দরকার। শুরুর পরিকল্পনায় এটা ছিল না। এখন নগরের ব্যস্ত এলাকার স্টেশনগুলোর নিচে এ জন্য বাড়তি জায়গা খোঁজা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু স্থাপনা ভাঙা পড়তে পারে। এ ছাড়া মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনার ব্যয় বিপুল। এটা বিবেচনায় নিলে বড় অঙ্কের যাত্রী ভাড়া ধরতে হবে। এ জন্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে ভাড়া কম রাখার চিন্তা করছে। তবে এখনো ভাড়ার হার ঠিক হয়নি।