পার্বতীপুর মুক্ত দিবস আজ
আবদুল্লাহ আল মামুন, দিনাজপুর
🕐 ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
১৯৭১ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর পার্বতীপুরের মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দুদিন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ভীত হয়ে রাতের প্রথম প্রহরেই পাকবাহিনীরা পালিয়ে গেলে ১৫ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় পার্বতীপুর। মুক্তিযোদ্ধা দলের কমান্ডার মো. আলাউদ্দিন, কমান্ডার মরহুম আফজাল হোসেন, কমান্ডার মরহুম আবু বকর সিদ্দিক, আমজাদ হোসেন, আহমেদ আলী মংলু, কমান্ডার মরহুম আবু মুসা, কমান্ডার মরহুম তমেজ উদ্দিন, মজিবর রহমান ও কমান্ডার মরহুম ইব্রাহিম প্রামাণিক সবাই নিজ নিজ দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পার্বতীপুর শহর ঘিরে ফেলেন।
শহরের কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে প্রচণ্ড ফায়ার শুরু করেন তারা। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনীর তিনটি বোমারু বিমান পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে বোমা নিক্ষেপ করে। এর একটি বিমান পার্বতীপুর রেল জংশন স্টেশনের উত্তর দিকে অবস্থিত ডিজেল সেডের তেলের ট্যাংকারে বোমা ফেলে। এতে ধ্বংস হয় ট্যাংকারটি। কালো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা সীমান্তের ওপারে ভারতের ভেতর থেকেও দেখা যায়। দেশে রংপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, সেতাবগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকেও আগুনের শিখা দেখা যায়। এ ঘটনায় পাকিস্তানি সৈন্য, মিলিশিয়া বাহিনী, পুলিশ, বিহারি রাজাকার, বাঙালি রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও পার্বতীপুরে বসবাসকারী অর্ধ লক্ষাধিক অবাঙালি বিহারিদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে।
সেদিন সবার চোখে মুখে ভয়-ভীতির ছাপ পরিলক্ষিত হয়। সারা দিন আলোচনার বিষয় ছিল ‘ডিজেল ভি নেহি তো ইঞ্জিন ভি ক্যায়সে চলারাহা, আওর ইঞ্জিন নেহিতো ক্যায়ছে ট্রেন (ট্রেন) চলাতা’। অর্থ হলো, ডিজেল না হলে তো ইঞ্জিন কেমনে চলবে। ইঞ্জিন ছাড়া তো ট্রেন চলবে না। এদিন এখানকার বিহারি রাজাকার কমান্ডার বাচ্চা খান, কামরুজ্জামান এমএনএ, তার বড় ভাই শোয়েব, মতিয়ার, ঠিকাদার ইকবাল, ওদুদ আর বদরু চেয়ারম্যানসহ সব বিহারি নেতা পরিবার-পরিজনসহ পাশের সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। পরে তারা পাকিস্তানে চলে যায় সেখান থেকে।
অন্যদিকে, সমস্ত বিহারি ১৪ ডিসেম্বর রাতে ২টি বিশেষ ট্রেনযোগে সৈয়দপুরে চলে গেলে পার্বতীপুর শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চল হানাদার দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যমুক্ত হয়। ১৫ ডিসেম্বর পার্বতীপুর মুক্ত হয়। সেদিন সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে বিজয়োল্লাস করে। মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার বিজয় উদযাপন চলে ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ১৫ ডিসেম্বর পার্বতীপুর হানাদারমুক্ত হওয়ার পর মুক্তিবাহিনীরা সকল রাজাকারকে খুঁজতে থাকি।
ভোটগাছ এলাকায় মোসলেম উদ্দীন নামের এক রাজাকারকে পাই আমরা। ধরে তার হাত, পা, কানসহ বিভিন্ন অঙ্গ কেটে পুরো গ্রাম জুতার মালা পরিয়ে ঘোরাই তাকে। এ সময় সে বলেছিল, আমাকে এভাবে কষ্ট না দিয়ে শুট করে একবারে মেরে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তার শরীরের অঙ্গগুলো এক এক করে কাটার পর শুট করে পূর্ব থেকে খুঁড়ে রাখা কবরে লাথি মেরে ফেলে দেয় আমাদের সাথী মুক্তিযোদ্ধারা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
