শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
তাদের স্বপ্ন পূরণের পথেই বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষলগ্নে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় বাংলার সূর্যসন্তানদের। পাক হানাদার বাহিনী যখন বুঝতে পারল বাংলার স্বাধীনতা আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না তখনই তারা মেতে ওঠে এক ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞে। স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ যেন মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর পেশাদারিত্বের দিক থেকে এক চরম শূন্যতায় পড়ে সেই নীলনকশা আঁটে তারা। আর ১৪ ডিসেম্বর তা কার্যকর করে তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সহযোগিতায়।
রাতের অন্ধকারে ঘাতকচক্র ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরিবার-পরিজনদের মাঝ থেকে তাদের বেশির ভাগকেই নিয়ে যাওয়া হয় চোখ বেঁধে। তাদের মরদেহ ফেলে রাখা হয় মিরপুর ও রায়েরবাজারে বধ্যভূমিতে।
পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করে ঘাতকের দল। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। সেই কালরাতে যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, দার্শনিক গোবিন্দচন্দ্র দেব, শিক্ষাবিদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশিদুল হাসান, আনোয়ার পাশা, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, শিক্ষানুরাগী অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলিম চৌধুরী, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন, আবুল খায়ের, নিজামুদ্দীন আহমেদ, সেলিনা পারভীন।
দেশ যখন স্বাধীন হলো বিজয়ের পতাকা উড়ছিল বাংলার আকাশে, তখনই একে একে পাওয়া যাচ্ছিল এই মাটির কৃতী সন্তানদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের খবর, স্বাধীনতার আনন্দে মাতোয়ারা মানুষ শিউরে ওঠে বর্বর হানাদারদের নির্মমতার কথা জানতে পেরে।
স্বাধীনতার পর জানা যায়, পাক-হানাদার বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল আরও ভয়াবহ। তারা সারা দেশে আরো ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু পরাজয়টা তাদের এত কাছে ছিল যে, তারা সে চক্রান্ত পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেনি।
হানাদারদের হাতে আটক হয়েও মৃত্যু ভয়ে ভীত হননি বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। ঘাতকের বুলেট তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে কিন্তু সেই মৃত্যুই তাদের দিয়েছে অমরত্ব। কবির ভাষায় বলা যায় ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ প্রকৃত অর্থেই বাংলার এই সূর্যসন্তানদের মৃত্যু নেই, বাংলার মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় তারা বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।
স্বাধীনতার এই বীর শহীদদের আত্মাহুতির বিনিময়েই আজকের বাংলাদেশ। যারা এই আলোকিত মানুষগুলোকে হত্যা করেছে দীর্ঘদিন তারা বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু শেষাবধি তাদের অনেককেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে সেই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী এ দেশীয় ঘাতকদের কারও কারও। কেউ কেউ পালিয়ে আছে বিদেশে, তবে বাংলা আর বাংলাদেশ তাদের আজন্ম শত্রুই রয়ে গেছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে দিনভরই রয়েছে নানা কর্মসূচি। বাংলার স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী এই বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রথমে শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পরপরই শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসার ফুলে ছেঁয়ে যাবে মিরপুর ও রায়েরবাজারের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে, টেলিভিশন ও বেতার সম্প্রচার করছে নানা অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশকে পেছনে টেনে রাখার এক জঘন্য খেলার অংশ ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা কিন্তু এ দেশের মানুষের দুর্দমনীয় প্রচেষ্টা আর স্বাধীন বাংলাকে সোনার বাংলায় পরিণত করার প্রত্যয়ের ফলে বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতার অনেক স্বপ্নই পূরণ করেছে, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ এখন শুধু আর কল্পনা বা পরিকল্পনার বিষয় নয়, অনেকটাই বাস্তবতা।