ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উল্লাপাড়া মুক্ত দিবস আজ

নূর মোহাম্মদ সরকার, সিরাজগঞ্জ
🕐 ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর উল্লাপাড়া হানাদারমুক্ত হয়। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ায় উল্লাপাড়া আপামর জনতা আনন্দ মিছিল ও উল্লাসে ফেটে পড়ে।

মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে উল্লাপাড়ার সর্বত্র চলে অসহযোগ আন্দোলন, সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে তৎকালীন পার্ক মাঠে বাঁশের লাঠি ও কাঠের রাইফেল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ১৬ মার্চ উল্লাপাড়া থানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয় এবং থানা ভবন থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকায় হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবর উল্লাপাড়ায় পৌঁছানোর পর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ১৮ মার্চ আবদুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার বাঘাবাড়িতে পাকবাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ২১ এপ্রিল পাকবাহিনী ট্রেন যোগে সিরাজগঞ্জের দিকে আসতে থাকে। উল্লাপাড়া ঘাটিনা রেলসেতুর কাছে পাকবাহিনী পৌঁছামাত্র মুক্তিবাহিনীর হাতিয়ার গর্জে ওঠে এবং কয়েকজন শত্রুসেনা নিহত হয়।

২৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনী বাঘাবাড়ী থেকে সড়ক পথে এবং ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনযোগে উল্লাপাড়ায় পৌঁছে। তারা রাজাকার ও দালালদের সহায়তায় উল্লাপাড়ার ব্যাপক অগ্নিসংযোগ হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট শুরু করে। ২৫ এপ্রিল ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডবলীলা চালায় চড়িয়া শিকার ও কালিবাড়িতে। তারা গ্রামটিকে চারদিক থেকে ঘিরে নারী পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। আজও সেখানে শহীদদের স্মরণে ২৫ এপ্রিল শোক দিবস পালন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা, মুজিববাহিনী ও পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের যোদ্ধারা একে একে পাক বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে সম্মুখ ও গেরিলাযুদ্ধে নাস্তানাবুদ করতে থাকেন। তারা একে একে বিভিন্ন থানা লুট, রাজকার ক্যাম্প লুট ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ এবং গোলাবারুদ নিয়ে শক্তিশালী হয়ে পাক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং পাক হানাদারদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের প্রতিহত ও খতম করে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন জায়গায় পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে পাক বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত এবং গোলাবারুদ খোয়া যায়।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় ১ নভেম্বর তাড়াশে। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শেষ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হানাদার সেনাকর্মকর্তা, রাজাকার ও সেনাসদস্য নিহত হয়। এবং অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়। অবশেষে বিভিন্ন জায়গায় পাক বাহিনীর পরাজয়ের খবর উল্লাপাড়ায় পাকসেনাদের মাঝে পৌঁছে গেলে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পাকসেনারা তাদের ঘাঁটি গেঁড়ে থাকা বিভিন্ন ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে অস্ত্র গোলাবারুদ ধ্বংস করে উল্লাপাড়া ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

 
Electronic Paper