ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

থমকে গেছে এডিস নিধন কার্যক্রম

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯

শীত মৌসুমে কিউলেক্স মশার উপদ্রব কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিঁটাতে ব্যস্ত থাকায় এডিস মশা নিধন কার্যক্রম থমকে গেছে। ফলে কিউলেক্স মশার পেছনের ছুটতে গিয়ে এডিস মশা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে এখনো মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যার বেশির ভাগ রোগী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাস করেন। ঢাকার বাইরে থেকেও ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন ঢামেকে।

সূত্র জানায়, কিউলেক্স মশার উপদ্রব কমাতে নালা-ডোবা ও বাসা-বাড়ির আশপাশের নোংরা পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম থমকে গেছে। এ সুযোগে নতুন করে এডিস মশার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের ভেতর। অথচ মশা নিধনের কার্যক্রম জোরেশোরে চালাতে এ বছর বাজটে বাড়িয়েছিল দুই সিটি করপোরেশন। সংস্থা দুটি যে উদ্দেশে বাজেট বাড়ানো হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং কিছুদিন আগে এডিস মশা নিধনে যে চিরুনি অভিযান চালানো হয়েছিল, সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিউলেক্স মশা নিধনে ওষুধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩ মাস আগে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিধনে বাড়িবাড়িতে গিয়ে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালায়। কিন্তু বর্তমানে সেই অভিযান বন্ধ রয়েছে। ফলে কিউলেক্স মশার পাশাপাশি এডিস মশার উপদ্রব সমানতালে বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পরিচ্ছন্ন অভিযান চলমান থাকলে কিউলেক্স মশার উপদ্রব যেমন কমত; তেমনি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও কমে আসত। সিটি করপোরেশন প্রতিদিন বাড়ির ভেতরে গিয়ে স্প্রে করতে পারলেও নদী-নালার নোংরা পানিতে স্প্রে করেনি। এছাড়া কচুরিপানা পরিষ্কার ও মশার ওষুধ কেনায় প্রতিবছরে দুই সিটি করপোরেশন ৫০-৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ। কিন্তু দুই সংস্থা নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে বাকি টাকা কৌশলে লুটপাট করছে। সঠিকভাবে ডোবা, জলাধার পরিষ্কার করা হচ্ছে না।

সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের ৪-৫ তলার ৫০২ ও ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এ দুটি ওয়ার্ডে প্রতিদিনই ৭-১০ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হচ্ছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডাক্তার-নার্সরাও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

৫০২ নম্ব^র ওয়ার্ডে ২৯ নভেম্ব^র শারমিন আক্তার (২৫) কেরানীগঞ্জ থেকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিতে এসেছেন ঢামেকে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ৪০ বছর বয়সে শাকিল নামে আরেকজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। মিরপুর এলাকার বেবী আক্তার (৪০), মালিবাগ থেকে আমেনা বেগম (৩৬), পিরোজপুর থেকে হ্যাপী (৩৮), যাত্রাবাড়ী থেকে মাহিয়ান ও রেনু আক্তার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢামেকের তথ্যমতে, গত মাসের কয়েক দিনের ডেঙ্গু রোগীদের পরিসংখ্যানে ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডে ২ নভেম্বর ১১ জন, ১২ নভেম্বর ৬ জন, ১৭ নভেম্বর ৩ জন, ২৩ নভেম্বর ৫ জন, ২৫ নভেম্বর ৭ জন, ২৮ নভেম্বর ৭ জন, ২৯ নভেম্বর ৭ জন ভর্তি হয়েছেন। এভাবে প্রতিদিন কমবেশি ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে চলতি মাসের ২ ডিসেম্বর ৪ জন, ৩ ডিসেম্বর ৭ জন, ৭ ডিসেম্বর ৪ জন এবং ৯ ডিসেম্বর ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এভাবে প্রতিদিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গু রোগীরা এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৪ বছর বয়সী ইকবাল হাবিব টাঙ্গাইল থেকে এসেছেন।

তিনি বলেন, প্রথমে কয়েক দিন শরীরের জ্বর জ্বর ভাব দেখে স্থানীয় ফার্মেসি ওষুধ কিনে খান। এতেও জ্বর ভালো হয় না। পরে ডাক্তারের কাছে গেলে পরামর্শ দেন ঢামেকে আসতে। এখানে ডাক্তার দেখালে প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করতে দেয়। পরীক্ষা শেষে দেখা যায় আমার ডেঙ্গু হয়েছে। এজন্য কয়েকদিন ধরে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। একই অবস্থায় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা মাহিয়ানের। তিনি বলেন, শীতের মৌসুমে শরীরে জ্বর আসায় প্রথমে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনেন। কিন্তু তাতেও জ্বর না ছাড়ায় একদিনের মাথায় ঢামেকে চলে আসেন। সেখানে চিকিৎসক দেখার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

৬০২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নারগিস আক্তার নামে নার্স বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের নিয়মিত পরিচর্যায় রাখতে হয়। চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটলে প্লাটিলেট কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবার ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। জ্বর, মাথাব্যথার উপসর্গ অপেক্ষাকৃত কমই পাওয়া যাচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীরই রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণেই এবারের ডেঙ্গু অন্যবারের চেয়ে আলাদা। চিকিৎসদের পরামর্শে আমরা নিয়মিত ডেঙ্গুরোগীদের অতিরিক্ত সময় দেওয়ার চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, গত মাসের সরকারি হিসাবে অনুযায়ী এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ গতকাল ২৪ ঘণ্টায় নতুন ডেঙ্গু রোগী ২৮ শতাংশ কমেছে। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৩৬ জন ও ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৩ জন।

সেখানে ঢকায় নতুন ভর্তি ২৪ জন আর ছাড়পত্র ২৫ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি ১২ জন এবং ছাড়পত্র ও ২৮ জন। সর্বমোট সারা দেশে সর্বমোট ভর্তি রোগী সংখ্যা ২৪৩ জন। ঢাকা মহানগরীতে মোট ভর্তি রোগীর ১৬১ ও ঢাকার বাইরে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮২ জন। সারা দেশে ছাড়পত্র প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৯৯.৫ শতাংশ।

কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাক্তার আয়শা আক্তার খোলা কাগজকে বলেন, ঢাকা শহরের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১২টি হাসপাতাল, বেসরকারি ২৯টি হাসপাতাল ও ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডেঙ্গু রোগীদের এই হিসাব দেওয়া হয়েছে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম বাড়াতে আউটসোসিংয়ে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

 
Electronic Paper