ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নাগরিকত্ব বিলে টানাপড়েন

বিক্ষোভে উত্তাল ভারত

তুষার রায়
🕐 ১১:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯

লোকসভায় গত সোমবার রাতে পাস হওয়া বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল ভারত। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল বিলটিকে সাম্প্রদায়িক ‘বৈষম্যমূলক’ অভিহিত করে এটি বয়কটের ডাক দিয়েছে। ভারতের মুসলিম সংগঠনের নেতারা এই আইন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। বিলটি চূড়ান্তভাবে পাস হলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সুপারিশ করেছে দেশটির একটি প্রভাবশালী সংস্থা।

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বিলের আপত্তিকর অভিযোগের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) মাধ্যমে ভারতীয় অভিবাসী মুসলিমদের তাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বিজেপি সরকার।

বাংলাদেশসহ পাশ্ববর্তী দেশে থেকে ভারতে আসা শরণার্থী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে এনআরসি আইনের আওতামুক্ত করতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে। এতে পাশ্ববর্তী দেশগুলো থেকে ভারতে আসা মুসলিমদের সংকট বাড়বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও টানাপড়েন বাড়বে।

বিতর্কিত ওই বিলে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’

এদিকে ভারতের মুসলিম নেতারা বলছেন, একদিকে এনআরসির মাধ্যমে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের নাম রাষ্ট্রীয় তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতে বৈধতার স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এটা সরকারের সাম্প্রদায়িক বৈষম্য।

ভারতের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, ভোট ব্যাংকের রাজনীতির কারণে এ বিলের মাধ্যমে হিন্দু তোষণ ও অভিবাসী মুসলিমদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার। এনআরসির মাধ্যমে মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন করার ষড়যন্ত্র করছে দলটি। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। মঙ্গলবার সকাল থেকেই আসামে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নসহ অসংখ্য সংগঠন। আসামে সমস্ত সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে, বন্ধ স্কুল-কলেজও। সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। রাজ্যের দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ত্রিপুরায় সড়ক পথ, রেলপথ বন্ধ; সব মিলিয়ে স্তব্ধ ত্রিপুরা। মণিপুর, অরুণাচলেও রাজপথে নেমেছে বহু মানুষ।

লোকসভায় দেওয়া বক্তব্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না থামার কারণে বিলটি আনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতের আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অনেক বেশি হয়েছে। আপনারা কি বলতে চান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হবে? একটি অনুপ্রবেশকারীকেও রেহাই দেওয়া হবে না।’

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিলে অমিত শাহের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। বরং তারা শান্তি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছেন। আমরা বলতেই পারি, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা এখন খুব ভালো। আগে যারা বিদেশে চলে গিয়েছিলেন, তারাও এখন ফিরে আসছেন।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাহলে তা ঠিক না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ ঠিক নয়। এখানে সব ধর্মের মানুষই তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বিনা বাধায় উদযাপন করে। বাংলাদেশে নির্যাতনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই।

মোমেন জানান, তিনি আশা করেন যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। বন্ধুপ্রতীম ভারত এমন কিছু করবে না, যা উভয় দেশের জনগণের দুশ্চিন্তার কারণ হয় কিংবা আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

বিএনপির নিন্দা
এদিকে ওই বিল পেশের সময় অমিত শাহর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ বক্তব্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং ঘৃণা ছড়াবে। বিএনপি সরকারের সময়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত আমরা এড়িয়ে চলেছি। এরকম ঘটেইনি বলা যায়। এরপরও কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে, সেটা সাম্প্রদায়িক নয়, সেটা রাজনৈতিক, দলের মধ্যে সমস্যার কারণে হতে পারে।

তিনি বলেন, এই সংশোধনী আরও সাম্প্রদায়িক। ভারতের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি আর রক্ষা হচ্ছে না। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে আমাদের নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

মার্কিন কমিশনের সমালোচনা
এদিকে ওই বিল তোলায় অমিত শাহ-সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) বলছে, সংসদের দুই কক্ষে বিলটি যদি পাশ হলে অমিত শাহসহ ভারতের প্রভাবশালী নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।

 
Electronic Paper