শ্রদ্ধায় অজয় রায়ের শেষ বিদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
গণমানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অজয় রায় শেষ বিদায় নিলেন। বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে মরদেহ আনা হলে সেখানে মানুষের ঢল নামে। অজয় রায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন নানা অঙ্গনের মানুষ ও পেশাজীবীরা। ছিলেন শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, কবি, লেখক, সাহিত্যিক, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরা।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অজয় রায় একজন উঁচুমানের ব্যক্তি ছিলেন। ঢাবির দুই হাজার শিক্ষকের হাতেগোনা দশ-বারোজন শিক্ষকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। ঢাবির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে অনেক সংগ্রাম করেছিলেন, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন স্বায়ত্তশাসনের অবস্থা খুবই নাজুক।
তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় মুক্তমনা ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ছেলে অভিজিৎ রায়ের বিচার শুরু হলেও তার বিচার দেখে যেতে পারেননি।
ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় একজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র অংশ নিয়েছিলেন।
অভিনেতা হাসান ইমাম বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ছিলেন। গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছিলেন অগ্রণী সৈনিক।
অধ্যাপক অজয় রায়ের ছোট ছেলে অনুজিৎ রায় বড় ভাই অভিজিৎ রায়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, দাদার হত্যাকাণ্ডের রায় যদি বাবা দেখে যেতে পারতেন তবে হয়তো বা কিছুটা সান্ত্বনা নিয়ে মারা যেতেন। মামলাটি চলছে প্রায় চার বছর হতে চলল। এ সময়ে বাবার শারীরিক অসুস্থতা আরও বেড়েছিল।
অনুজিৎ আরও বলেন, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করব না, তবে যেকোনো মামলার তো নিজস্ব একটা গতি থাকে। হয়তো বা সেজন্য ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এগুলো নিয়ে বাবা তেমনটা আক্ষেপ যদিও করতেন না। সব কিছু মিলিয়ে বলতেই হয়, বাবা বিচারটা দেখে যেতে পারলেন না। এক অপূর্ণতা নিয়েই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন।
অনুজিৎ রায় বলেন, বাবা চাইতেন বাংলাদেশ যেন হয়ে ওঠে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল রাষ্ট্র। মুক্তচিন্তার লেখকদের জন্য গণতান্ত্রিক একটি দেশ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। এ দেশের স্বাধীনতার জন্যই বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। দেশকে স্বাধীন করেছিলেন যাতে সব ধরনের ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস দূর করে এ দেশের মানুষ প্রগতিশীল একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা পায়। তিনি সেই স্বপ্নই দেখতেন।
অজয় রায়ে কনিষ্ঠ পুত্র বলেন, বাবা তার কর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন। মৃত্যুর আগে তার ইচ্ছা ছিল হাসপাতালে মরণোত্তর দেহদান করবেন। ওনার সেই ইচ্ছা পূরণ করা হবে।
গত সোমবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান অজয় রায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। গত ২৫ নভেম্বর জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন খ্যাতনামা এ শিক্ষক এবং মুক্তমনা লেখক।