রোহিঙ্গা
‘মানসিক চাপে’ কক্সবাজারবাসী: টিআইবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ২:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
নিপীড়ন-নির্যাতন-গণহত্যার শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মানসিক চাপে রয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থান : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা এসব তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলোতে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ও ৫০ শতাংশ শিশু রক্তশূন্যতায় ভুগছে। এছাড়াও ৬-২৩ মাস বয়সীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য খাদ্য পায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সামাজিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে, কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসী মোট জনসংখ্যার ৩৪.৮%, যেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ৬৩.২%, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে মানসিক চাপের ঝুঁকি তৈরি ইচ্ছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোর মোট চাহিদার ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় হচ্ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর। পাশাপাশি স্থানীয়দের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুকি তৈরি হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার ও বাংলাদেশ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে। অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন কাজে (লবণ চাষ, চিংড়ি হ্যাচারি, চাষাবাদ) রোহিঙ্গাদের নিয়োজিত করছে। ফলে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের সহজলভ্যতার কারণে স্থানীয়রা কাজের সুযোগ হারাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা, মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের যানবাহন এবং ত্রাণবাহী ট্রাকের চলাচল ও চাপের কারণে রাস্তা-ঘাটের ক্ষতি ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশগত ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৬.১৬৪ একর বনভূমি উজাড় হওয়াসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া, ভূমিধসের ঝুঁকি। ক্যাম্পে জঙ্গিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতার ফলে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বিরাজ করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আরও জানানো হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক প্রচারণার ঘাটতি, প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে প্রায় ৮৫-৯০ জন শিশু জন্মগ্রহণ করছে। বর্তমানে ৬০০ জন এইচআইভি রোগী রয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশংকা সত্ত্বেও কোনো স্ক্রিনিং এর ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে ডিপথেরিয়া নির্মূল হওয়ার কাছাকাছি থাকলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহামারির ঝুঁকি। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ৮ হাজার ৬৪১ জন মৃত্যু ৪৫ জন।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংকট নিরসনের কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।