অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে জমে উঠছে সিটি নির্বাচন
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৮
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ৩০ জুলাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রচারণা এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে জমে উঠেছে সিটি নির্বাচন। মনোনয়ন দাখিল, প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১০ জুলাই থেকে এ তিন সিটিতে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়।
এরপর থেকেই প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে একে-অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করতে শুরু করেন। তিনি সিটিতে নির্বাচন কমিশনে এখন পর্যন্ত ৩১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে- রাজশাহীতে ১৫, বরিশালে ১১ এবং সিলেটে ৫টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে রাজশাহীতে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন গতকাল সোমবার পর্যন্ত ইসিতে ১৫টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একে-অপরের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত একই ধরনের অভিযোগ করে যাচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত লিটন ১৫ ও বুলবুল ১০টি অভিযোগ দিয়েছেন। গতকালও লিটন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পোস্টার ও ব্যানার ছেঁড়ার ৪টি অভিযোগ দিয়েছেন। তবে বুলবুল এদিনে কোনো অভিযোগ দেননি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া লিটনের অভিযোগগুলোর মধ্যে দুটি ছাড়া অন্যগুলো প্রতিপক্ষ বিএনপির বিরুদ্ধে। অন্য দুটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের এবং অন্যটিতে পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের হয়রানির অভিযোগ এনেছেন তিনি। তবে তার এই অভিযোগকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, পুলিশসহ গোটা প্রশাসন যখন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে, তখন তার এই অভিযোগ বিএনপির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কাউন্টার দেওয়ার অপচেষ্টা। জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে বলেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা দলীয় পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে বিএনপির কর্মীরা গেলে তিনি সাক্ষাৎ দিচ্ছেন। এ আচরণ পক্ষপাতমূলক বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে জানতে জেলা প্রশাসক এস এম আব্দুল কাদের বলেন, সভা বা গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কেউ ফিরে গেছেন কি না, তা তার জানা নেই। তবে আইনের ভেতর থেকে যতটুকু সম্ভব তিনি সবার জন্যই করছেন।
পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ গত শনিবার রাতে হানা দেয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এতে কর্মিসমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কোন নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে, অভিযোগপত্রে তা উল্লেখ করেননি লিটন।
আওয়ামী লীগের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার বক্তব্য সন্তোষজনক হওয়ায় অভিযোগটি নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয়ই পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। প্রধান দুই দলের অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনী প্রচারে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে এবং পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির ছয়টি অভিযোগ হলো- নির্বাচনী কাজে আ.লীগ প্রার্থীর সার্কিট হাউস ব্যবহার। বিভিন্ন এলাকায় নৌকার বিলবোর্ড। রাত ৮টার পরও নির্বাচনী মাইকের ব্যবহার ও প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে শোভাযাত্রা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাঠ দিয়ে নৌকা প্রতীক বানিয়ে প্রদর্শন। ১৩ জুলাই রাতে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একাধিক মাইকের ব্যবহার। এতে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
আ.লীগও পাঁচটি অভিযোগ দিয়েছে। এগুলো হলো- আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের সামনে বিএনপি কর্মীদের মিছিল। কাউনিয়া সড়ক ও বিএম কলেজে মিছিল। নগর ভবনের মতো সরকারি অফিসের সামনে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন। কাশিপুর এলাকায় নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা। বাজার রোড ও কলাডেমায় ধানের শীষের পক্ষে মিছিল।
একজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, তারা দুপক্ষেরই অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগগুলো পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ৫টি লিখিত অভিযোগ পড়েছে। আর এ ৫ অভিযোগের মধ্যে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২টি, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে ১ ও আরিফ-কামরানের বিরুদ্ধে যৌথভাবে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ। এ ছাড়া ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী এ কে এ লায়েক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তথ্যপ্রদানকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা কুমিল্লার মুরাদনগরের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রলয় কুমার শাহা বলেন, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৫টি লিখিত অভিযোগ পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। আমরা অভিযোগগুলো খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছি।
অভিযোগগুলো হচ্ছে- স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী, মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ করেন। বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর মাইকিংয়ের বিষয়ে অভিযোগ করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক দিবাকর ধর একটি আলোকচিত্রীসহ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চোঙ্গা ব্যবহার করে মাইকিংয়ের অভিযোগ করেন। অন্যদিকে ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এ কে এ লায়েক অভিযোগ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এস এম আমজাদের ভাই সাবেক যুগ্ম সচিব পদ-পদবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।