ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সক্রিয় মানবপাচার চক্র

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৭, ২০১৯

শীত মৌসুম এলেই শান্ত হয়ে পড়ে সমুদ্র। আর সমুদ্রের এই শান্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে অশান্ত হয়ে ওঠে মানবপাচার চক্র। এবারও এমন শীতের আমেজে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারীরা। তাদের মূল টার্গেট কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা। গত শনিবার বিদেশে পাচারকালে ৯ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গত কয়েক মাসে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উপকূলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পৌঁছেছে। তাদের অনেকেই গেছে বাংলাদেশ থেকে। এক্ষেত্রে যে পয়েন্টগুলো দিয়ে মানবপাচারের ঘটনা বেশি ঘটে, সেগুলোর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা বলছে, শীতের সময় সমুদ্র শান্ত থাকে, এই সুযোগ নিয়ে নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের চেষ্টা ব্যাপক চেহারা নিতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজারের এক রোহিঙ্গা নারীর অভিযোগ, চার বছর আগে তার ছেলেকে ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মালয়েশিয়া নেওয়া হয়েছিল। রওনা দেওয়ার পর তাকে ফোন করে দুই লাখ টাকা চাওয়া হয় এবং হুমকি দেওয়া হয়, টাকা না পেলে ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। তিনি বহু কষ্টে পৌনে দুই লাখ টাকা জোগাড় করে পাচারকারীদের প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন। কিন্তু তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো হদিস পাননি।

শাহপরীর দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানিয়েছেন, সেখানে লোকজন জড়ো করে ছোট ছোট নৌকার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের সমুদ্রের গভীরে নিয়ে বড় নৌকায় তুলে দেওয়া হয় মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য।

শাহপরীর দ্বীপ থেকে একজন সমাজকর্মী মো. সোনা আলী বলেন, শীতে সমুদ্র শান্ত থাকার সময়টাকে মানব পাচারকারীরা তাদের মৌসুম হিসেবে দেখে। এখন শীত আসার আগেই দালালসহ পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এখন এই অবৈধ মানবপাচারের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের ধরন পাল্টে গেছে। যাকে পাচার করা হচ্ছে, তার জীবিত শরীর মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর পাচারকারীরা অর্থ নিয়ে থাকে। পাচারের আগে এ নিয়ে মৌখিক চুক্তি হয়। কক্সবাজারের পুলিশ বলেছে, গত দুই মাসে মানবপাচারের কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের সবাই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ।

সর্বশেষ গত শনিবারও উদ্ধার হওয়া নয়জনের সবাই রোহিঙ্গা। ফলে রোহিঙ্গারা এখন দালালদের মূল টার্গেট বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মনে করছে। তবে এ ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত পাচারকারী চক্র বা দালালদের কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন রামরু’র তাসনীম সিদ্দিকী বলছিলেন, অনিশ্চয়তা থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া প্রবণতা বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকটটা আমরা সেভাবে একটা লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারছি না। তখন রোহিঙ্গা ভালো কিছুর আশায় মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকরাও কিন্তু যাওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে রোহিঙ্গা বেশি হলেও বাংলাদেশের নাগরিকরাও পাচারের টার্গেটে থাকবে।

তিন বছর আগে বঙ্গোপসাগরে দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে পাচারের চেষ্টা উদ্বেগজনক অবস্থায় গিয়েছিল। তখন থাইল্যান্ডে গভীর সমুদ্রে লোকজনকে আটকে রেখে এবং নির্যাতন করে সেটা দেখিয়ে বাংলাদেশে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা নিয়েও অনেক খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল।

সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুলিশ সারা দেশে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে পাচারকারী সন্দেহ দুইশ’র বেশি লোককে গ্রেফতার করে অনেক মামলা করেছিল। এই মানব পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় মানব পাচারকারীরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেছেন, তাদের ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হয়েছে বলেই এখন মানবপাচারের চেষ্টা উদ্বেগজনক অবস্থায় নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা না থাকলে হাজার হাজার মানুষ পাচার হতো। কয়েক বছর ধরে সেই অবস্থা আর নাই। এখন চেষ্টা হলেই ধরা পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের যাদের আত্মীয়স্বজন মালয়েশিয়ায় আছে, তারাই দালালের সহায়তা নিয়ে সমুদ্রপথে যাওয়া চেষ্টা করে। এটা মানব পাচার নয়। এটা ভিন্ন চেহারা নিয়েছে। কারণ এখানে নিজে থেকে যাওয়ার চেষ্টা হয়। তবে রোহিঙ্গা টার্গেট হলেও পাচারের চেষ্টা যে আছে, সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।

এদিকে ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার জিরো টলারেন্স নিয়ে মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে।

 
Electronic Paper