সবুজের হলুদ ব্যাধি
মনোজ দে
🕐 ১১:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
রোকেয়া খাতুন। সন্তান হারানো এই মায়ের আহাজারিতে কান্নায় বুক ফেটেছে, চোখ ভেসেছে পুরো দেশের মানুষের। তার বড় ছেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। গত ৬ অক্টোবর শেরেবাংলা হলের ১০১১নং কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় তার সহপাঠীরা। ২০১১ নম্বর কক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা অমানুষিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে শরীরে আঘাতের পর আঘাত করা হয়। ব্যথায় যন্ত্রণাকাতর আর চরম পিপাসার্ত আবরার পানি চাইলে একফোঁটা পানিও দেয়নি কেউ। মারের চোটে বমি করলেও পাষণ্ডরা বলেছিল, ‘নাটক করছে আবরার’। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, ব্যথা আর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আবরার।
সন্তানহারা মা রোকেয়া খাতুনের সান্ত্বনা পাওয়ার ভাষা কোথায়? বুকে নিঃসীম শূন্যতা চাপা দিয়ে দ্রুততম সময়ে ছেলের খুনিদের ন্যায়বিচার প্রত্যাশা তার। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর খবর শোনার পর রোকেয়া খাতুনের প্রশ্ন ছিল- ‘এ শোক আমি কি করে সইব?’ আহাজারি করে তিনি বলেছিলেন, ‘ছেলেটা ঢাকা মেডিকেল, ঢাবি আর বুয়েটে চান্স পেয়েছিল। সব বিসর্জন দিয়ে ভর্তি হয় বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ার হবে বলে! আজ ছেলেটা লাশ! তাকে মেডিকেলে পড়তে বলেছিলাম, সে পড়ে নাই; ছেলেটা আজ মেডিকেলের মর্গে!’
সন্তানের লাশ নিজ কাঁধে বহন করে দাফন করার পর শোকার্ত বাবা বরকত উল্লাহর আর্তনাদ ছিল, ‘আমার এ কী হলো? আমার নিরীহ ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। যারা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারল, তাদের ফাঁসি চাই।’
আবরার হত্যায় দল-মত নির্বিশেষে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সব মহলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অমানুষিক’ এই হত্যার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকারী যেই হোক তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সর্বোচ্চ সক্রিয়তা দেখিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িত ১৯ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। বর্ণনা দেয় সেই কালো রাতে আবরারের ওপর চালানো ভয়ঙ্কর নির্যাতনের।
আবরারের হত্যাকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা ‘অমানুষ’ হয়ে গেছে। আবরারের মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি খুনিদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস দেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, আবরারের এ হত্যার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
আবরারের হত্যাকারীদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড হওয়া মানে, কয়েকটা ব্রিলিয়ান্ট ছেলে বাংলাদেশের মেধাবী কয়েকটা সন্তান চলে গেল, হারিয়ে গেলে, দেশ তো ক্ষতিগ্রস্ত হলো! শুধু আবরারের জন্য নয় যারা এ অপকর্মটি করেছে তাদের জন্য, তারাও তো মেধাবী ছাত্র। এমনকি ভ্যান চালায় পিতা এমনও তো আছে।’
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে নভেম্বর মাসের শুরুতেই। দ্রুত বিচার নিশ্চিতের জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ মামলার গ্রেফতার ১৯ আসামির সবাই এখন গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে। এরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, শামীম বিল্লাহ, মোহাজিদুর রহমান, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান মনির ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
গ্রেফতারদের সবাইকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষী সাব্যস্ত সবাইকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে বলে বুয়েট উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার জন্য সবাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে, আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত যারা তারা অপরাধী ও খুনি। তাদের অপরাধের দায় ছাত্রলীগের ওপর বর্তায় না।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় সর্বোচ্চ মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষালয় বুয়েট। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কমপক্ষে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখে মাত্র কয়েকশ শিক্ষার্থী প্রকৌশল এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। বুয়েটে যারা পড়ার সুযোগ পান সন্দেহাতীতভাবেই তারা মেধাবী।
একজন বুয়েট শিক্ষার্থীকে ঘিরে পরিবার, স্বজন, বন্ধু, এলাকার মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্রের প্রত্যাশার পারদ তাই স্বাভাবিকভাবেই থাকে উত্তুঙ্গে। কিন্তু আশা ও স্বপ্ন জাগানিয়া সেই শিক্ষার্থীরাই যখন সহপাঠীকে নির্মম ও পাশবিকভাবে পিটিয়ে খুন করে তখন ব্যাধিটা তো অনেক গভীরের। প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক কার পাপে কার দায়ে স্বপ্নবান সবুজ তরুণ প্রাণের ভেতরে মৃত হলুদ অপরাধীর বীজ অঙ্কুরিত হয়। এ প্রশ্ন এড়িয়ে শুধু খুনিদের ওপর দায় চাপিয়ে রাজনীতি, সমাজের গভীর এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া আদৌও সম্ভব?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ঘেঁটে সম্প্রতি একটি অনলাইনপোর্টাল জানিয়েছে, ১৯৯১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৮ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬১ জন। এর মধ্যে ১১৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের শিক্ষার্থী। পোর্টালটি জানাচ্ছে, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী। দলটির ৪৫ জন কর্মী নিহত হয়েছেন।
এরপরই রয়েছে ছাত্রদল কর্মী নিহতের ঘটনা। এই সংগঠনটির ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। অন্যান্য ছাত্রসংগঠন, সাধারণ ও রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি এমন নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের নিহতের সংখ্যা ২২ জন। সাধারণ শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮ জন। বাম সংগঠন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নিহতের সংখ্যা ১১ জন।
আবরার হত্যার পর শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ‘দানবের জন্ম’ নামে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছেন। সেখানে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মতো একটা নিরাপদ জায়গায় কীভাবে অন্যান্য শিক্ষার্থী, প্রশাসন সবার চোখের সামনে এ ধরনের দানবীয় একটা ঘটনা ঘটল।
তার ভাষ্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলটি তাদের (শিক্ষার্থী) জন্য অনেক নিরাপদ জায়গা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের দেখে-শুনে রাখে, তাদের নিরাপত্তা দেয়। কেউ যেন মনে না করে এটি শুধু বুয়েটের চিত্র, এটি আসলে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র, কোথাও বেশি কোথাও কম।’ তিনি তার লেখার শেষটা করেন আরেকটি প্রশ্ন দিয়ে- ‘এই দেশে আমরা আর কতদিন এভাবে দানবের জন্ম দিতে থাকবো?’
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা অংশের শিক্ষার্থীদের এই যে নির্দোষতা আর স্বপ্ন নির্বাসিত করে দানব হয়ে ওঠার গল্প তা কিন্তু নতুন হয়। গত ২৮ বছরে শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক সহিংসতাজনিত মৃত্যুর পরিসংখ্যানই বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নিতে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা মরিয়া। বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর দখলদারিত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে মরিয়া প্রচেষ্টা তাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একই নীতিতে হেঁটেছে।
এর পেছনে রয়েছে বিদ্রোহ, বিক্ষোভের ভূত তাড়া করা এক ইতিহাস। পাকিস্তানপর্বে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ পর্বে এরশাদের স্বৈরশাসনের পতন এবং ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি শাসনবিরোধী আন্দোলন সবকিছুর সূতিকাগার ছিল বিশ^বিদ্যালয়গুলো। এ অভিজ্ঞতা থেকেই শাসকদের লক্ষ্য তাই যেকোনো মূল্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ। অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করা হয়, অন্য সব শিক্ষার্থীর ওপর নিয়ন্ত্রণ ও দমনপীড়ন চালানোর জন্য। নব্বইয়ের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের বাইরে ক্ষীণধারায় হলেও যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন জারি আছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়কে করায়ত্ব করার জন্য শাসকরা আর যে নীতি নিয়েছে সেটা হচ্ছে কোনো বিবেচনা ছাড়াই দলীয় আনুগত্য বিচারে উপাচার্য থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ। ফলে আনুগত্য প্রদর্শন আর ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করা ছাড়া তাদের আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। শিক্ষা, গবেষণা ও জ্ঞান চর্চার চেয়ে লেজুড় রাজনীতির চর্চা যেহেতু বেশি লাভজনক ও নিরাপদ, তাই শিক্ষকতার নীতি-নৈতিকতায় বাধা দিয়ে বেশিরভাগই শুধু সেটা চর্চাতেই মনোযোগী। ক্ষমতাসীন দলগুলোর এই নীতি উচ্চ শিক্ষালয়কে দিনে দিনে এক দানব তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে।
বুয়েটে মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় যারা জড়িত তারাও বাংলাদেশের বাস্তবতায় মেধাবী। তাদের বেশিরভাগেরই বুয়েটে আসার আগে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম ও সহিংসতার নজির নেই। বাবা-মায়ের ভালো, সুবোধ, পড়াশোনা করা সন্তান তারা। মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকাতেও তারা পেয়ে এসেছে সমীহ। বর্বরোচিত এ খুনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা শুধু তাদের বাবা-মা, স্বজনদের একবুক জমানো স্বপ্ন-প্রত্যাশা চুরমার করে দেয়নি, দেশের সব অভিভাবকের মনেই তৈরি হয়েছে সংশয়, দ্বিধা আর প্রশ্ন। বুয়েটে ভর্তি হয়ে তারা যে ছাত্রলীগ বা ক্ষমতাসীনদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তা জানা ছিল না বেশিরভাগ অভিভাবকদের। তাদেরই বা কী সান্ত্বনা?
অনীক সরকার। আবরার ফাহাদকে যে সবচেয়ে বেশি আঘাত করে সেই অনীক ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের কাছে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সন্তান বলে পরিচিত ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী অনীকের সময় কাটত পড়ার টেবিলে। প্রতিবেশীদের কাছে অনীক পরিচিত সুবোধ ছেলে হিসেবে। ব্যবসায়ী বাবা আর গৃহকর্মী মায়ের সংসারে কড়া শাসনে বেড়ে ওঠেন তিনি। অথচ বুয়েটে ভর্তি হয়ে বদলে যায় অনীক।
আরেক আসামি মেফতাহুল ইসলাম জিয়নকে নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্নের শেষ ছিল না। ছেলেবেলা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী জিয়ন বুয়েটে পড়ার সুযোগ পেয়ে তার মুদি দোকানি বাবার স্বপ্ন একধাপ পূরণ করেছিলেন। পাড়া-প্রতিবেশির কাছে অত্যন্ত ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত জিয়নের পরিবর্তন ঘটে বুয়েটে পড়ার কয়েক মাস পর থেকেই। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত হয়ে পড়েছেন সেটা পরিবারের কেউ কেউ জেনেছিল। কিন্তু ক্ষমতাচর্চার সেই রাজনীতিই যে সবার স্বপ্ন ভেঙে ছত্রখান করে দেবে কে জানত।
এলাকায় নিঃসঙ্গ ও মুখচোরা ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন মনিরুজ্জামান মনির। বুয়েট ছুটি হলে বাড়িতে গিয়ে সারাদিন একা একা কাটাতেন তিনি। হয়তো বিকেল হলে মাঠে গিয়ে ছোট ছেলেদের সঙ্গে খেলতেন। বাজারে ঘোরাঘুরি বা কোনো আড্ডায় তাকে দেখা যেত না। আর মনিরই পরিবারের সব আশা ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন।
এই হত্যা মামলার ১৩তম আসামি মো. আকাশ হোসেন। বাবা রিকশাচালক। মা গৃহিণী। দুজনের কেউই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয়। অথচ তাদের ঘর আলো করে এসেছিলেন মেধাবী আকাশ। বাতি জ্বালানোর সামর্থ্য ছিল না বলে হারিকেনের আলোয় পড়তেন অদম্য এই মেধাবী। বৈরি জীবনযুদ্ধে চান্স পান বুয়েটে। তার স্বপ্ন ছিল ছোট দুই ভাইবোনকে মানুষ করা। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানো। অথচ একটা দানব তৈরির কারখানায় সেই আকাশই অমানুষ হয়ে উঠল। কার কারণে, কার দায়ে, কার পাপে আকাশদের সবুজ হৃৎপিণ্ডে দানবের বাসা?
আবরার হত্যার খুনিদের সাজা হোক। সেইসঙ্গে বন্ধ হোক এই অমানুষ আর দানব তৈরির কারখানা। রাজনৈতিক দলগুলো এর দায় না নিলে বন্ধ হবে না সবুজের এই হলুদ ব্যাধি।