জেদ্দায় চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ করবে বাংলাদেশ
৪ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেকে পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
দেশের প্রধান প্রবাসী আয় পাঠানো দেশ সৌদি আরব। সেখানে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মরত। সেসব শ্রমিকের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সৌদি আরবের জেদ্দায় এই কমপ্লেক্স নির্মাণসহ পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৩ হাজার ১৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সৌদি আরবে চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের কনস্যুলেটগুলোর মধ্যে জেদ্দা অন্যতম বৃহৎ একটি কনস্যুলেট। এই কনস্যুলেটের কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবন থেকে। এ রকম ভাড়া করা একটি ভবনে সৌদি আরবের মতো বৃহৎ জনশক্তির বাজারে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেবা দেওয়া ক্রমাগত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর কনস্যুলেট ভবন, অফিসার ও স্টাফ কোয়ার্টার এবং হলরুমের ভাড়া বাবদ প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
এ জন্য চ্যান্সেরি এবং রাষ্ট্রদূত ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে সৌদি সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১৫৪ কাঠা আয়তনের একটি প্লট কেনা হয়। এ প্লটেই নির্মাণ হবে চ্যান্সেরি ভবন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় সাইক্লোন সেন্টারগুলো হবে বহুমুখী ব্যবহারের জন্য। এগুলো স্কুল হিসেবেও ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব সাইক্লোন সেন্টারের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে সংযোগ সড়ক তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য স্থায়ী রিজারভার এবং মাল্টিপারপাস সেন্টার রুম নির্মাণ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রকল্পগুলোর মধ্যে বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দর্শনা-মুজিবনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এছাড়া চাষাড়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-গোদনাইল-আদমজী ইপিজেড সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
সৌদি আরবে চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, চ্যান্সেরিতে প্রবাসীরা যাতে স্বস্তিদায়ক বসার জায়গা এবং পানিসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা পান সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া দ্রুত কাজ শেষ করতে বারবার যেন প্রতিনিধি দলের বিদেশে যেতে না হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপচয় দুর্নীতির চেয়েও ভয়ংকর। কেননা দুর্নীতি হলে তো ধরা যায়; কিন্তু অপচয়ের ব্যয় তো নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া প্রকল্পে সবচেয়ে বড় অপচয় হচ্ছে সময়। তাই অপচয় রোধ করে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প জনবলসহ প্রক্রিয়াকরণ ও অর্থায়নের ধাপ যাতে কমানো যায় সে জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এখন থেকেই কাজ শুরু করব।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের পঞ্চম দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোনো ব্যয় বাড়ানো হয়নি। যেহেতু প্রকল্পটি পঞ্চমবার সংশোধন করা হয়েছে তাই এটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। জমি নিয়ে মামলা থাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।