ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঝুঁকি আছে ব্যবস্থা নেই

ঢাকা ও বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি

সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৯

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখনো প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আড়াইশর বেশি মানুষ। ডেঙ্গু বিপদ এখনো পুরোপুরি না কাটলেও রাজধানীর মশক নিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। যেটাকে বিপদ হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। যদি কোনো কারণে মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় তাহলে আগামী বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।

তাদের মতে, এখন যে স্থানে মশায় ডিম পাড়ছে সেই স্থানগুলো যদি ধ্বংস করা না হয় তাহলে আগামীতে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ডিমগুলো থেকে আবার বাচ্চা ফুটবে এবং ছড়িয়ে পড়বে। যে কারণে এখন ডেঙ্গু প্রতিরোধ না করলে সামনে বিপদ আছে। ডেঙ্গু আগে ছিল শুধু ঢাকা শহরে। এখন জেলা-উপজেলা শহরেও ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ১ হাজার ৭৮১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৩৬১ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে ১৯৩ জন, জুন ১৮৮৪, জুলাই ১৬২৫৩, আগস্ট ৫২৬৩৬ জন, সেপ্টেম্বরে ১৬৮৫৬ এবং অক্টোবরে ৫৪০৮ (১৯ দিনে) আক্রান্ত হয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। বিগত ১৮ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে এ বছর ৯৩ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সরকারি হিসেবে নিহত হয়েছেন ৯৮ জন আর বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। প্রাকৃতিক কারণে বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমলেও এখনো অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর দুই সিটিতে মশা নিধন কর্মসূচিতে ভাটা পড়েছে। সারা বছর মশক নিধন চলবে সরকারের পক্ষ থেকে এমনটা বলা হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধনকর্মীরা বলছেন, তারা খুবই ক্লান্ত। গত আগস্ট মাস থেকে তাদের ছুটি বাতিল। তার পর থেকে টানা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে বর্তমানে আগের মতো মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। একনাগাড়ে কয়েক মাস কাজ করায় তারা (কর্মীরা) ক্লান্ত, অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যে কারণে কেউ কেউ ছুটিও কাটাচ্ছেন। তারা আরও বলছেন, সারা বছর কার্যক্রম চালাতে হলে আরও লোকবল দরকার।

জানা গেছে, এবার জেলা ও উপজেলায় পর্যায়েও ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। ঢাকায় মাঝে মধ্যে কিছুটা মশক নিধন হলেও ঢাকার বাইরে মশক নিধনের কার্যক্রম নেই বলেই চলে। অথচ গত আগস্টে সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছি তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ডেঙ্গু নিধনে সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হবে।

আরও জানা গেছে, ডেঙ্গুর মৌসুম এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হলেও জুলাই-আগস্টে প্রকোপ বেশি থাকে। এবার জুলাইয়ের শেষ দিকে এবং অগাস্ট মাসে রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। আক্রান্তদের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হয়েছে স্বজন ও পরিবারগুলোকে। ডেঙ্গুর টেস্ট করানো কিট সংকটও লক্ষ করা গেছে গত আগস্টে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বছরব্যাপী ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না হতেই সরকারের মশক নিধনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রমে কোনো ক্রমেই শৈথিল্যতা দেখানো যাবে না। সারা বছরই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারকে তৎপর থাকতে হবে। এখন প্রাকৃতিকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। এই সুযোগে সরকারের উচিত ডেঙ্গুু উৎপত্তি স্থলকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়া। সেটা যদি না করা হয় তাহলে এ বছর এডিস মশা যেখানে ডিম পেড়েছে সেই জায়গার পানি শুকিয়ে গেলেও মশার ডিম নষ্ট হবে না। আগামী মৌসুমের শুরুতে যখন বৃষ্টি হবে তখন তা থেকে বাচ্চা ফুটবে। আর সেই বাচ্চা থেকে আবার নতুন বাচ্চা হবে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ খোলা কাগজকে বলেন, মশক নিধনে সরকারের ঢিলেঢালাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু মশক নিধন অব্যাহত রাখতে হবে। যদি এখন সরকার ঢিলেভাব দেখায় তাহলে আগামী বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মশক নিধন কার্যক্রম আগের মতো ভালো করে চালাতে হবে। প্রতিদিন মশক নিধন করতে হবে। কোনো ক্রমেই বন্ধ করা যাবে না। শুধু ঢাকায় মশক নিধন চালালেই হবে না। যেহেতু সারা দেশেই এবার ডেঙ্গু ছড়িয়েছে তাই সারা দেশেই কার্যক্রম চালাতে হবে। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, এমনকি উপজেলা শহরেও মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। তা না হলে আগামী বছর যদি আবার ছড়ায় তাহলে আবারও ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়াবে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার খোলা কাগজকে বলেন, যদি মশক নিধন কার্যক্রম সারা বছর চালানো না হয়, তাহলে বাংলাদেশে সারা বছরই ডেঙ্গু হবে। এডিস মশার প্রজনন সারা বছরই থাকে, কিন্তু শীতকালে একটু কম থাকে। ডেঙ্গুর কার্যক্রম যদি না চলে তাহলে আগামী বছর গ্রামগুলোয় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গু যদি ভয়াবহ আকার ধারণ করে সেটা হবে সবচেয়ে বড় বিপদ। আগামীতে ঢাকায় এ বছরের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি হবে সেটা মনে হচ্ছে না, তবে গ্রামে বেশি হবে সেটা মনে হচ্ছে। গ্রামগুলোয় যেহেতু ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে, সেহেতু ডিমগুলো থেকে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা কার্যক্রমটা তখন করি যখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। কিন্তু ডেঙ্গু যখন কমে তখন আমরা রিলাক্স অনুভব করি। কিন্তু ডেঙ্গুর বেলায় রিলাক্স হওয়ার সুযোগ কম।

 
Electronic Paper